খুলনা, বাংলাদেশ | ১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বাংলাদেশে শান্তি অত্যন্ত জরুরি, এটা যেন মনে রাখি: প্রধান উপদেষ্টা
  নরসিংদীতে ঈদের দিন ৪ জনকে কুপিয়ে জখম, একজনকে জবাই করার চেষ্টা

১২ অমুক্তিযোদ্ধার ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’ ফেরতের আবেদন

গেজেট ডেস্ক

মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে সনদ নিয়েছেন, এমন অন্তত ১২ ব্যক্তি সনদ ফিরিয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে অবসরে যাওয়া এক ব্যক্তি। এক ব্যক্তি তাঁর আবেদনে সনদ নেওয়া ভুল হয়েছে বলে উল্লেখ করে করেছেন। দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন কেউ কেউ। লিখেছেন—‘আমি লজ্জিত’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সনদ ফেরত দিতে আবেদন করা ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা আবেদন করেছেন, নাম প্রকাশ করলে তাঁরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবেন। এ কারণে তাঁদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম গত ১১ ডিসেম্বর নিজ দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও যাঁরা সনদ নিয়েছেন, তাঁদের তা ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধা নিয়েছেন। এটি জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এটি ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ।

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা একটি ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দেব, যাঁরা অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এসেছেন, তাঁরা যাতে স্বেচ্ছায় এখান থেকে চলে যান। যদি যান, তাঁরা তখন সাধারণ ক্ষমা পেতে পারেন। আর যদি সেটি না হয়, আমরা যেটি বলেছি, প্রতারণার দায়ে আমরা তাঁদের অভিযুক্ত করব। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ আহ্বানের পর ১২ জন সদন ফেরত দিতে আবেদন করেন।

ফারুক ই আজম ২৩ মার্চ তাঁর দপ্তরে বলেন, আরও যদি কেউ স্বেচ্ছায় সনদ ফেরত দিতে চান, সে জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে কেউ সনদ ফিরিয়ে দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘যেহেতু তাঁদের পেছনে অর্থ খরচ হয়েছে, তাই আমার একার পক্ষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এ প্রস্তাব পাস করাতে হবে। তারপর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে।’

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, একজন তাঁর আবেদনে নিজের নাম–পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও প্রলোভনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছি। এ অনৈতিক কাজের জন্য আমি লজ্জিত। আমি স্বেচ্ছায় এ সনদ ফেরত দেওয়ার আবেদন করেছি।’

এর আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সনদ বাতিল করা হয়। তাঁরা হলেন সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, এ কে এম আমির হোসেন ও যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার। এই সনদ ব্যবহার করে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়াদের তথ্য যাচাই

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ঘোষণা দেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যাঁরা সরকারি চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের তালিকা করা হবে। যাচাই–বাছাই করা হবে।

পরে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বিস্তারিত তথ্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া ৮৯ হাজার ২৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা জমা পড়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন। সে হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৬ শতাংশ।

উপদেষ্টা ফারুক ই আজম গণমাধ্যমে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া প্রায় ৯০ হাজারের মধ্যে ৪০ হাজার আবেদনের যাচাই–বাছাই হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ের পুরো শক্তি তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজে লাগানো হয়েছে। দেখা গেছে, অনেক ধরনের জালজালিয়াতি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও চাকরি করছেন অনেকে। জালিয়াতি প্রমাণিত হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!