নির্যাতন, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। গতকাল শনিবার সারাদেশে কর্মসূচির মাধ্যমে নিপীড়কদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার দাবি তুলেছে নানা শ্রেণি-পেশার ক্ষুব্ধ মানুষ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এরপর হল পাড়া থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল বের হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন।
বিক্ষোভে স্লোগান ওঠে, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’।
শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চান তারা। বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তারা।
এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় ধর্ষকদের প্রকাশ্য ফাঁসির দাবি জানিয়ে রোকেয়া হলের নারী শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেন। মিছিলটি রোকেয়া হলের সামনে থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার হলের সামনে ফিরে আসে। সেখানে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও বিগত বছরগুলোয় যারা ধর্ষণের জড়িত ছিল তাদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের মিছিলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্য রেপিস্ট’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
ধর্ষণের প্রতিবাদে গত রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদও।
ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। গত রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’ এ রকম বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বলে দিতে চাই, আপনারা যদি আমার বোনদের ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে এই দেশের শাসনভার চালানোর অধিকার আপনারা হারিয়ে ফেলেছেন।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও গত রাত পৌনে দুইটার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
খুলনা গেজেট/এইচ