খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ৬ মার্চ, ২০২৫

Breaking News

  গুলশান থানার মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিকের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত
  অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন অধ্যাপক সি আর আবরার

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচনে লড়বে বিএনপি

গেজেট ডেস্ক

বিচারাধীন সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফলে আগামীতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তার আর কোনো আইনি বাধা থাকল না।  দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (ত্রয়োদশ) আগেই তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন এবং তার নেতৃত্বেই তারা ভোটে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচন কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এমন আশংকা থেকে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে বৈতরণী পারি দিতে চায় দলটি।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। অবশ্য ২০১৮ সালে ‘সাজা প্রাপ্ত’ আসামি হওয়ায় বাতিল হয়েছিল তার প্রার্থিতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। তিনি নিজেও এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। অপেক্ষা করছি লন্ডনে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসন সুস্থ হয়ে শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন। তার নেতৃত্বে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আদালতকে ব্যবহার করে সাজা দিয়েছিল। যার কারণে তিনি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আদালত স্বাধীনভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারছে। আর এ কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা মামলাগুলো থেকে বেকসুর খালাস পাচ্ছেন। ফলে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যে আইনি বাধা তা কেটে গেছে।’

গত সোমবার ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনার হাজিয়া লাহবিবের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় তিনি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি হাজিয়া লাহবিবকে বলেছেন, ‘ভোট সম্ভবত এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’

আদালত কর্র্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়া ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত হন। সাময়িক মুক্তির পর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি। এরপর গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। মুক্তির পর গত বছরের ২১ নভেম্বর খালেদা জিয়া দীর্ঘ এক যুগ পর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রতিহিংসা প্রতিশোধ নয়, পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাসযোগ্য উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশ এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। এখনো ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা গণঅভ্যুত্থানে প্রাপ্ত অর্জন নস্যাতের চক্রান্ত করছে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে অভ্যুত্থানের ফসল নষ্ট হয়। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে।’

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১৭ বছরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩০টির বেশি মামলা হয়। তবে, সাজা হয় দুটি মামলায়। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার সাত বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ১৫ জানুয়ারি আপিল শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে খালাস দেয়। গত সোমবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন তিনি। ফলে দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ড থেকে তিনি সাজামুক্ত হলেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারের পর্যায়ে থাকা সব মামলায় খালাস কিংবা অব্যাহতি পেলেন তিনি। মামলা, সাজা, উন্নত চিকিৎসা নিয়ে কয়েক বছর ধরে নানা ঘটনা ও নাটকীয়তার পর গত ৮ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপির চেয়ারপারসন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

২০১৮ সালের গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ে তার সেই দণ্ড দ্বিগুণ করে তাকে এখন ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়া ওই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। কারণ বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা নির্ধারিত হয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী। তাতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের বেশি মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আমরা চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে অংশ নিয়েছি। এবার আগামী সংসদ নির্বাচনে আবার তার নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার প্রতীক্ষায় রয়েছি। আমরা আশা করছি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলন করেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিবারই পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন এবং সবগুলো আসনে তিনি জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনেও খালেদা জিয়া প্রার্থী ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতে জয়ী হন। ২০১৪ সালে বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!