জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য নয়, বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করার জন্য এসেছিলাম। আমাদের আইনজীবীরা সুন্দরভাবে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেছেন। আপিল বিভাগের কাছে আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশী।
এসময় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন ও আইনজীবী শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের প্রথম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল (বুধবার) দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেন।
জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী। তাকে সহযোগিতা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।
এর আগে সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য মঙ্গলবার ধার্য করেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেন।
আদালতে বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এসময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল বিভাগে বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। কিন্তু ওইদিন শুনানি হয়নি। রিভিউ আবেদনটি শুনানি হওয়া প্রয়োজন। পরে আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।
গত ২৩ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চে এক বিচারপতি না থাকায় আদালত শুনানির দিন পিছিয়ে দেন।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
তখনকার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শতশত বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। যদিও এটি প্রহসনের রায় বলে আখ্যায়িত করে আসছে জামায়াতে ইসলামী।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে জামায়াত নেতা আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ২৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম