খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ মাঘ, ১৪৩১ | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে গ্রেপ্তার আরও ৬০৭
  কর্মকর্তা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযুক্তদের অনুসন্ধান-তদন্ত বিঘ্নিত হবে না: দুদক

উর্দুভাষী ভাষা সৈনিক খুলনার ড. ইউসুফ হাসান

খন্দকার ওয়াহিদুজ্জামান সোহাগ

উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেয়ার পাকিস্তান সরকারের দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হয়ে ১৯৫২ রক্তাক্ত হয়েছিল বাঙালি সন্তানেরা। আবার বিস্ময়ের ব্যাপার সেই বাঙালি জাতির স্বপক্ষে আন্দোলনও করেছিলেন এক উর্দু ভাষী। অবাঙালি হয়েও প্রগতিশীল রাজনীতি সাথে যুক্ত থাকার কারণে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন থেকেই তিনি সমর্থন জানিয়েছেন মাতৃভাষা বাংলার স্বপক্ষে। সংগ্রাম করেছেন বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। প্রতিবাদের জন্য ঢাকাতে অন্য ভাষা সৈনিকদের সাথে তিনিও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি ড. ইউসুফ হাসান।

তার জন্ম বিহারের পাটনায়। শিক্ষাজীবন পার করেছেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ছিলেন একজন আদর্শবাদী শিক্ষক ।

কর্মদক্ষতার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। ষাটের দশকে তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে চীন ভ্রমণও করেছেন। প্রথম জীবনে শিক্ষকতা করেছেন নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলে; এরপর জীবিকার সন্ধানে ১৯৭৭ সালে চলে আসেন খুলনা শহরে। বসবাস শুরু করেন ফেরিঘাট চামড়া পট্টি এলাকার ৪৭, দেবেন বাবু রোডে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে গেছেন আব্দুল খালেকের এই পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায়। প্রথমে এসে খুলনা লায়ন্স স্কুলের শিক্ষকতা জীবন, প্রিন্সিপাল হিসেবে।

এরপর তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন প্রথমে ফারাজী পাড়া লেনে স্বল্প পরিসরে পরে সিমেট্রি রোডে অবস্থিত খুলনার প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ‘খুলনা প্রিপারেটরি স্কুল’। এ সময়ে তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় খুলনার অন্যতম সাংস্কৃতিক উপস্থাপক, বেতার ব্যক্তিত্ব কবি নাসিরুজ্জামানের সাথে। তাকে সাথে নিয়ে ড. ইউসুফ স্কুলটাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। শুরু থেকেই স্কুলটিতে ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা দেয়া হত। অনেক বিদেশি শিশুরাও পড়ত। প্রায় ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে অন্যতম হলেন, নাসিমা বানু, মিসেস জাভেদ জিলানী, নুরজাহান বেগম, মিশরী বেগম মিশু, মিস্টার হালদার প্রমূখ। স্কুলটির অধ্যক্ষ ছিলেন ডক্টর ইউসুফের স্ত্রী নাসিমা আরা হাসান। প্রায় ৩০ বছর সুনামের সাথে চলার পর ২০০৮ সালে স্কুল বন্ধ হয়ে যায় ।

ডক্টর ইউসুফ হাসান ১৯৭৭ সালে খুলনায় এসে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। ন্যাপ (মোজাফফর) সাথে যুক্ত হন। সম্পর্ক ছিল বামপন্থী নেতা তোহা, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল হকের সাথে। এ সময় খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার বিচরণ ছিল। খুলনায় কবি সুফিয়া কামাল আসলে তাঁর সাথেও দেখা করেছেন। আড্ডা দিতেন হোটেল ডিলাক্সে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে। এসবই কবি নাছিরুজ্জামানের কাছ থেকে শোনা।

‘রূপান্তর’ নির্বাহী পরিচালক স্বপন গুহ ও শিক্ষাবিদ আনোয়ারুল কাদির মীরু জানালেন, ১৯৯৫ সালে ডক্টর ইউসুফ হাসানকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল; নগরীর সাতরাস্তার মোড়ে বিশাল প্যান্ডেল করে। সে অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে সংবর্ধিত অপর ভাষা সৈনিক সমীর আহমেদ, লুৎফর রহমান নুরু জাহাঙ্গীর, তোফাজ্জল হোসেন প্রমূখ। একটা স্মরণিকাও বেরিয়েছিল কিন্তু তা এখন দুষ্প্রাপ্য।

আলোচিত ভাষা সৈনিকের এক পুত্র ও এক কন্যা মিলিয়ে দুটি সন্তান। পুত্র সন্তানের নাম কাইফি ঢাকায় থাকে। এই মহৎ মানুষটি মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় পাঁচ বছর হলো।

মায়ের ভাষায় কথা বলার অনন্ত অধিকার থেকেই বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের সে গোড়া পত্তন। সেই অধিকারের চূড়ান্ত রূপান্তর আমাদের শ্রেষ্ঠ অহংকার মুক্তির সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা। আমরা পেয়েছি একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। যার অবদান ভাষা সৈনিকদের। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে সেই ভাষা সৈনিকদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

(লেখক: প্রবন্ধকার ও গবেষক )

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!