সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বর্তমানে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা অতিরিক্ত সচিব খান মো. নূরুল আমিনের (আইডি নং-৬২৮৩) বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তার আদেশের ফলে প্রতাপনগর ইউনিয়নের গড়াইমহল জলমহাল লুটপাট ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই ব্যক্তি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা খান মোঃ নূরুল আমিন এর নিকট দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মন্ত্রীপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অবেদন করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে নুরে আলম সিদ্দিকী ও আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের মৃত তালেব আলী মোড়লের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক মোঃ আব্দুর রশিদ মোড়ল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এই আবেদন করেন।
লিখিত আবেদনে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৭ অক্টোবর সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের গড়াইমহল জলমহালটি একসরা যুব সমবায় সমিতির পক্ষে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তারা ইজারা পান। কিন্তু তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. নুরুল আমিনের সহযোগিতায় স্থানীয় একটি মহল ওই জলমহলের ইজারা বাতিলের চেষ্টা করলে আব্দুর রশিদ বাদি হয়ে আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে দেঃ ১০৯/২০০৫ নং মামলা করেন। আদালত বাদি পক্ষে নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে ২০০৬ সালের ১০ মে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা শুনানীর সময় অসৎ উদ্দেশ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আমিনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন জানান। এ সুযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আমিন ওই দিনই জলমহলের ইজারা বাতিল করে দেন। পরদিন স্থানীয় জনগণ ওই জলমহলের প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটপাট করে নেয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ইজারা বাতিলের অদেশের বিরুদ্ধে আব্দুর রশিদ উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করলে উচ্চ আদালত সেটি স্থগিত করে। এছাড়া আশাশুনি সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা মামলা নং ১০৯/২০০৫-এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ইউএনওর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ভায়োলেশন মামলা করলে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তাকে (ইউএনও) তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়।
কারাদন্ডের আদেশ গোপন করে প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নূরুল আমিন সহকারি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালীন কয়েক মাস আগে এলপিআরে যান। তার প্রভাবের কারণে এলপিআরে না যাওয়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করতে সাহস পাননি বলে অভিযোগপত্রে নূরে আলম ছিদ্দিকী ও আব্দুর রশিদ উল্লেখ করেন। আবেদনপত্রে ৫০ লাখ টাকার মাছ লুটপাট, জলমহলের ইজারাসহ দেড় কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, খান মোঃ নূরল আমিন তার বিরুদ্ধে করা ভায়োলেশন মামলা যাতে তুলে নেওয়া হয় ও অপরাধ গোপন রাখতে অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা করান। এসব মামলায় বাদীরা পরে আদালতে স্বীকার করেছেন যে, তারা চাকরি রক্ষার স্বার্থে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইউএনওর নির্দেশ পালন করেছিলেন মাত্র।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই সাথে মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তারা জনপ্রশাসন ও মন্ত্রীপরিষদের সচিবের কাছে দাবি জানিয়েছেন, ইউএনও খান মো. নূরুল আমিন এর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় অন্তত দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক। একইসঙ্গে অভিযুক্ত সাবেক ইউএনওর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কর্মকর্তা সদ্য এলপিআরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সহকারি সচিব খান মোঃ নুরুল আমিনের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত ০১৭১২-৬৮০০২০ নং মোবাইলে রিং করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
খুলনা গেজেট/এনএম