আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের খুলনা জেলা ও নগর ইউনিটে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। উল্লিখিত দু’টি ইউনিটের দায়িত্বে পেয়েছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের স্ব-শরীরে সশস্ত্র যোদ্ধা ও দক্ষ সংগঠক। স্থানীয় রাজনীতিতেও তারা পরিচিত মুখ। দায়িত্ব নেয়ায় চার মাসের মধ্যে হাত দিয়েছেন সংসদকে জঞ্জাল মুক্ত করার জন্য। কোমর বেঁধে নেমেছেন অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণের কার্যক্রমে। এ কর্মসূচির প্রাক প্রস্তুতিতে অমুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার থেকে বিরত থাকার জন্য জেলা প্রশাসনকে নিবৃত করতে সফল হয়েছে ।
৫ আগস্টের পর নগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গা ঢাকা দেয়। মুক্তিযুদ্ধের চার যুগ পর তিনি মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তার সনদ, ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে নানা প্রশ্ন। এসএসসির সনদে ও জন্ম তারিখ নিয়ে ঘষা-মাজা আছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে গতিশীল করতে ২২সেপ্টেম্বর হাজী মহাসিন রোডস্থ উদয়ন সংঘে জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কেসিসি’র সাবেক মেয়র মো. মনিরুজ্জান মনিকে মহানগর ইউনিটের এবং মো. আবু জাফরকে জেলা ইউনিটের আহবায়ক মনোনীত হন। নয়া সংসদ জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে ১৭ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নানা কর্মসূচি পালন করে। রণাঙ্গনের যোদ্ধারা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন আয়োজিত সম্মাননা গ্রহণ করে।
সংসদের সূত্র জানান, অমুক্তিযোদ্ধাদের এক ঘোরে এবং তাদের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার না দেয়ার জন্য প্রশাসনকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। নগরীর মাষ্টারপাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে নিবৃত করা হয়। জেলা প্রশাসন বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। নয়া সংসদের এটি আরও একটি সফলতা। সংসদকে গতিশীল করার ধারাবাহিকতায় গত ১ ফেব্রুয়ারি উল্লিখিত ২টি ইউনিটের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। নগর ইউনিটের আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা ইউনিটের আহবায়ক মো. আবু জাফর, নগর ইউনিটের যুগ্ম আহবায়ক এড. আ ব ম নুরুল আলম, আব্দুল্লাহেল সাফি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অমুক্তিযোদ্ধা শণাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি একাত্তরের রণাঙ্গনে স্ব শরীরে সশস্ত্রযোদ্ধাদের একটি তালিকা এবং নানাভাবে সহযোগীদের অপর একটি তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। স্বাধীনতাত্তোরকালে খুলনায় এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম।
নগর মুক্তযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহবায়ক এড. আ ব ম নুরুল আলম বলেন, উদ্যোগ ইতিমধ্যে সফল হয়েছে। সংসদ আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেকখানি গতিশীল। আমেরিকা প্রবাসী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মিয়াপাড়ার আবুল কালাম আজাদ খোকা আত্মসমর্পন করতে সম্মত হয়েছে। সনদ বাতিল ও ভাতা বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রূপসা উপজেলার ২ জন অমুক্তিযোদ্ধা আত্মসমর্পন করে স্থানীয় সোনালী ব্যাংককে অবহিত করেছে। পরবর্তী ধাপে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নয়া কমিটি তৃতীয় জাতীয় সংসদের হুইপ অধ্যাপিকা হাসিনা বানু শিরিনের উত্তারাধিকারী, শাহিন আজাদ চৌধুরী ও জিয়া পরিষদের নগর আহবায়ক এড. আবুল হোসেন হাওলাদারের মুখোমুখি হবে। তাদের সনদ ও ভাতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা গুঞ্জন ছিল। তেরখাদা উপজেলার ইউসুফ আলী চৌহদ্দিও এই প্রশ্নের সম্মুখিন হবেন। জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একাত্তরে তাদের নিস্ক্রিয় ভূমিকা সম্পর্কে সবার জানা। ১৯৯৬ সালের পর অসত্য তথ্য দিয়ে এই দু’জন সনদ গ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ের সামাজিক অনুষ্ঠানে নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রথম পূনর্মিলনী উপলক্ষে সিটিয়ান নামক স্মরণিকায় ‘মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথায়’ এমএম সিটি কলেজ শিরোনামের প্রবন্ধে কলেজের উল্লিখিত দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম নেই। এ নিয়ে তারা কোন প্রতিবাদও করেননি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ, রণাঙ্গনের দু’জন সহযোদ্ধাকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করতে না পারায় জেলা প্রশাসন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মরহুম এসআর ফারুকের সনদ বাতিলের সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয় তার সনদ ও ভাতা বাতিল করে। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির আহবায়ক ছিলেন। ১৯৭৩ সালে জিলা স্কুল থেকে এসএসসির সনদ লাভ করেন।