খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকার চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি, নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র
  ২০২৫ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

খুলনা-ঢাকা নতুন রেল রুট : কমবে ভাড়া ও দূরত্ব, বাঁচবে সময় (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে নতুন ট্রেন জাহানাবাদ এক্সপ্রেস। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে ট্রেনটি। পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ নির্মাণের ফলে ট্রেনে যাতায়াতে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে গেছে। এই পথে ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়া যাবে পৌনে ৪ ঘণ্টায়। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে যাতায়াতে সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। নতুন এই রুটে দূরত্ব কমার পাশাপাশি সাশ্রয় হচ্ছে সময় এবং কমেছে ভাড়াও। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচলে আনন্দিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। খুশি রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরাও।

রেলওয়ের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা পথে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ এবং একই ট্রেন ঢাকা-বেনাপোল পথে ‘রূপসী বাংলা’ নামে চলাচল করবে। এ ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। দিনে দুইবার খুলনা–ঢাকা এবং ঢাকা–বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেনটি।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে তিনটি ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে দুটি আন্ত:নগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস। আর একটি নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। নতুন করে যুক্ত হচ্ছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এতে প্রায় ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। এর বাইরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে যশোরের বেনাপোলে যায়। এতে সময় লাগছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। এছাড়া খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে কমিউটার নকশিকাঁথা ট্রেন চলাচল করছে। এটি খুলনা থেকে রাত ১১টায় ছেড়ে যশোর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ভাঙা হয়ে ঢাকায় পৌছায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। এতে ১০ ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। ফলে নতুন ট্রেন সময় সাশ্রয় হবে অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। এছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা ট্রেনের চেয়ে ভাড়াও কম লাগছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে। এতে খুশি যাত্রী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ছেড়ে নোয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন, ভাঙ্গা জংশন হয়ে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। আর ঢাকা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনা পৌঁছাবে।

অন্যদিকে একই ট্রেন রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া প্রতিদিন ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে দুপুর আড়াইটায়। আর বিকাল সাড়ে ৩টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশন হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে। ট্রেনের ১২টি কোচে মোট ৭৬৮টি আসন থাকবে। উভয় ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার।

এদিকে খুলনা-ঢাকার নতুন রুটের ট্রেনের ভাড়াও নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে বিভাগ। ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ার ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ৮৫১ টাকা ও এসি সিট ১০১৮ টাকা।

অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের মূল্য শোভন চেয়ার ৬৩০ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১২০৮ টাকা ও এসি সিট ১৪৪৯ টাকা এসি বার্থ ২১৬৮। আর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের মূল্য শোভন চেয়ার ৬২৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১১৯৬ টাকা ও এসি সিট ১৪৩২ এবং এসি বার্থ ২১৫১ টাকা।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) খুলনা রেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে নতুন এই রুটের টিকিট কিনেছেন রূপসার বাসিন্দা কাজী আশরাফুল বারী। তিনি বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর নতুন রুটে ঢাকায় যাত্রার টিকিট কিনেছি। এই রুটে টিকিটের মূল্য কম, ৪৪৫ টাকায় টিকিট কিনেছি। খুব ভালো লাগছে খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে স্বল্প সময়ে ঢাকা যেতে পারবো- ইনশাআল্লাহ।

নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা সানাউল হক বাচ্চু বলেন, খুব শর্ট টাইমে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে পারবো। এতে শরীর জন্য আরামদায়ক হবে এবং ভাড়াও কম।

ট্রেন যাত্রী ওলি আহমেদ বলেন, খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। আগে আমাদেরকে অনেক পথ ঘুরে যেতে হতো। এখন সেই সময়টা অনেক কম লাগবে এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ীও হবে। এ জন্য আমরা সবাই বেশ খুশি।

মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, এই ট্রেনটি আরও আগে প্রয়োজন ছিল। অনেক লেট হয়ে গেছে। এই ট্রেনে খুবই সুবিধা। এতে খুলনা থেকে যেয়ে ঢাকায় অফিস শেষ করে আবার খুলনায় ফেরা সম্ভব।

ট্রেনের সাব লোকো মাস্টার ইসহাক মল্লিক বলেন, এই ট্রেনে স্বপ্ল সময়ে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে পারবে। এছাড়া ট্রেন ভ্রমণ নিরাপদ, যাত্রীরা নিরাপদেই যেতে পারবে আল্লাহর রহমতে।

খুলনা রেল স্টেশনের কর্তব্যরত সহকারী স্টেশন মাষ্টার মো. আল আমিন বলেন, খুলনাবাসীর বহু প্রতিক্ষিত ট্রেনটি ২৪ ডিসেম্বর থেকে খুলনা-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নামে যাত্রা করবে। এতে যাত্রীদের যাত্রা আরামদায়ক হবে। একইসঙ্গে কমবে ভাড়া ও দূরত্ব। বাঁচবে সময়। আশা করি সবাই খুলনা থেকে ট্রেন যাত্রায় আরও আগ্রহী হবেন।

রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ বলেন, জাহানাবাদ ট্রেনটি খুলনা থেকে কাশিয়ানি নড়াইল হয়ে পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। ঢাকা থেকে আবার একইভাবে রাতে খুলনায় এসে পৌছাবে। খুলনা থেকে ঢাকা রুটের অন্য ট্রেনের চেয়ে এতে সময় কম লাগবে। মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টায় ঢাকায় পৌছাবে। যা খুলনাবাসীর জন্য একটি বড় সুযোগ। একইসঙ্গে রেলওয়েও গর্বিত যে খুলনাবাসীকে এই সুবিধা আমরা দিতে পারছি। এরমাধ্যমে খুলনাবাসী স্বল্প সময়ে, স্বল্প দূরত্বে এবং স্বল্প খরচে তাদের গন্তব্য ঢাকায় পৌছাতে পারবে। এই ট্রেনে ১১টি যাত্রীবাহী কোচ এবং একটি লাগেজ ভ্যান রয়েছে। এই লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে খুলনা এবং আশপাশের জেলার বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বা মালামাল ঢাকায় নিতে পারবে। ব্যাপক পরিমাণে মালামাল বহন করা যাবে। ট্রেনে বিভিন্ন শ্রেণির ৭৬৮টি সীট রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!