ষোলো মাস পর পরিবারের কাছে ফিরে এলেন মানিকগঞ্জের ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামের রহমত উল্লাহ নামে এক যুবক। তাঁকে ফেরত পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন স্বজনরা। শনিবার দুপুরের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) ফজলে রাব্বি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন রহমতকে। রোববার ধামরাইয়ের নিজ বাড়িতে পৌঁছান তিনি।
স্বজনরা জানান, এক বছর চার মাস আগে র্যাব পরিচয়ে রহমতকে তুলে নেওয়া হয়। নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর কোনো সন্ধান মিলছিল না। কেন, কী কারণে র্যাবের পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়– সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না স্বজনরা।
রহমতের মা মমতাজ বেগম বলেন, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত ১২টায় ২৫-৩০ জন লোক সাদা পোশাকে মানিকগঞ্জে বাড়িতে এসে র্যাব পরিচয় দিয়ে তাঁর ঘুমন্ত ছেলে রহমত উল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন মানিকগঞ্জ, নবীনগর, ঢাকায় র্যাবের অফিসে গিয়েও ছেলের কোনো সন্ধান পাইনি। ধামরাই থানায় প্রথমে জিডিও নেয়নি। পরে গত বছরের ৭ অক্টোবর সাধারণ ডায়েরি করা হলে পুলিশ দীর্ঘদিনও তার সন্ধান দিতে পারেনি। শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে ফোনে জানানো হয়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। নিয়ে যান। এর পরই রহমত উল্লাহর বড় ভাই ওবায়দুল্লাহ ও ভগ্নিপতি মশিউর রহমান শনিবার রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে তাকে গ্রহণ করেন।
রহমত উল্লাহর মা মমতাজ বেগম বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ছেলের কোনো সন্ধান পাচ্ছিলাম না। আল্লাহর কাছে শুধু আমার ছেলে রহমত উল্লাহকে ফেরত চেয়েছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।
রহমত উল্লাহর বড় ভাই ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমার ভাই অনেকটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। কথা খুব কম বলছেন। রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, ২৯ আগস্ট র্যাবের পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর তাঁকে চোখ বেঁধে কোথায় রেখেছিল, তা তিনি বুঝতে পারেননি। এর পর তাঁকে ভারতে নিয়ে ছেড়ে দেয়। পাসপোর্ট না থাকায় ওই দেশের পুলিশ তাঁকে জেলহাজতে রাখে। সেখানে জেলহাজতে থাকার পর শনিবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাঁকে নদী পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন নিখোঁজের পর একদিন আমার ভাই ভারতের একটি ফোন নম্বর দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে। আমাকে জানায়, সে ওখানকার একটি জেলখানায় আছে। ওই সময় আমার ভাইকে ফেরত দেবে বলে ওখান থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আমার কাছ থেকে কিছু ডলার নেয়। ডলার নেওয়ার পর থেকেই ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রহমত উল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তাঁর ভাষ্যমতে, র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর ঢাকার কোনো এক জায়গায় নিয়ে তাঁকে জঙ্গি-সংক্রান্ত ভিডিও ছাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই বলে তিনি জানান।
রহমত উল্লাহর ধারণা, সম্ভবত বিমানবন্দরের কাছে কোনো জায়গায় তাঁকে নেওয়া হয়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ৯ মাস আটক করে রাখা হয় তাঁকে। এরপর তারা বলে, আপনাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক খোঁজাখুঁজি করছে। নিরাপত্তার জন্য ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে তাঁকে জানানো হয়। পরে যশোরে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলের দু’জন আরোহীর কাছে পৌঁছে দেয়। তারা ভারতের গোপালনগর এলাকায় ছেড়ে দিয়ে যায়। তারপর সেখানে ঘোরাফেরা করার সময় ভারতীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বিনা পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশ করার কারণে পাসপোর্ট আইনে মামলা দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। সাজা ভোগ শেষে ভারতীয় পুলিশ শনিবার সীমান্ত দিয়ে নৌকায় করে বাংলাদেশে পুশইন করে। পরে এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে গোমস্তাপুর থানার ওসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রহমত উল্লাহ ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামের মৃত আবদুর রবের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রহমত উল্লাহ সবার ছোট। বড় ভাই সৌদিপ্রবাসী। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা ও ভাবির সঙ্গে বাড়িতেই থাকতেন তিনি এবং ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ শিখছিলেন।
র্যাব-৪-এর সিপিসি-৩-এর মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ওই এলাকা আমাদের আওতাধীন নয়। এ ধরনের কোনো অভিযান পরিচালনা করিনি। সেখানে আমাদের টিমও যায়নি।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি ধামরাই থানায় যোগদানের পর রহমত উল্লাহকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা হয়েছে। কিন্তু তাঁর সন্ধান পাইনি। শনিবার বিষয়টি গোমস্তাপুর থানার ওসির মাধ্যমে জানতে পারি, রহমত উল্লাহ তাদের তদন্ত কেন্দ্রে আছে। সেখান থেকে রোববার দুপুরে তাঁর ভাই ও ভগ্নিপতি তাঁকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন। নিখোঁজ থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ