বাংলাদেশের অর্থনীতির দুটি ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই উদ্বেগ কাটাতে সরকারকে তারা ৬টি পরামর্শ দিয়েছে।
আইএমএফ যে দুটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তাহলো- বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াসহ কর অব্যাহতি অপসারণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার আরও নমনীয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বাড়ছে, এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সংস্থাটি মনে করে, মূল্যস্ফীতির চাপে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এজন্য প্রবৃদ্ধি কমবে। রাজস্ব আদায়ও কমেছে। রিজার্ভের অবস্থাও চাপের মুখে রয়েছে।
নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়াতেও সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে আইএমএফ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তারা যে টাকাটা নতুন করে বাজারে ছেড়েছে, সেটা তারা দ্রুত বাজার থেকে তুলেও নেবে। তবে সেটা যদি না করে তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে- যা দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে।
আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশে কর রাজস্ব অনুপাত কম। তাই একটি স্বচ্ছ ও ন্যায্য রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে রাজস্ব সংক্রান্ত সংস্কার করতে হবে।
ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করার পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বলেছে, দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা, বর্তমানে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে তার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক খাত পুনর্গঠনের জন্য একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা তৈরি করা। আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সংস্থাটি।
এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরে রফতানি খাত আরও বৈচিত্র্য করতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি সুশাসন বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আইএমএফের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
চতুর্থ কিস্তি ঋণ দেওয়ার আগে গত ৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। সফরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ও বিদ্যমান ঋণের চতুর্থ কিস্তির কাঠামোগত সংস্কারের শর্ত পালন নিয়ে পর্যালোচনা করে দলটি।
খুলনা গেজেট/এএজে