খুলনা, বাংলাদেশ | ১ পৌষ, ১৪৩১ | ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ফরিদপুরে বাসচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত
সম্মাননা অনুষ্ঠানে বক্তারা

অমুক্তিযোদ্ধারা সনদ সুবিধা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কলঙ্কিত করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে ৭১ ও ২৪ এর যোদ্ধাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম। এ অনুষ্ঠানে বক্তারা অমুক্তিযোদ্ধারা অসদুপায়ে সনদ এবং সুবিধা নেওয়াকে মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত ইতিহাসকে কলঙ্কিত বলে আখ্যায়িত করেছেন। অমুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা সেজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান এবং মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে। তা উদ্ধারের প্রয়াস চলছে।

খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারায় এ কথা বলেন। জেলা প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক মো. রেজাউল হক, কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন, সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার এডভোকেট স.ম বাবর আলী, নগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের আহবায়ক ও সাবেক মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের আহ্বায়ক মো. আবু জাফর, ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ শেখ সাকিব রায়হানের গর্বিত মা বেগম নুর ন্নাহার।

প্রধান অতিথি ৭১ এর গর্বিত ইতিহাস এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্য গবেষক ও ঐতিহাসিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৭১ বীর মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র নয় মাস যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। ৫৩ বছর এ গৌরব আমরা বহন করছি। তাদের অবদানকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমাদের নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। আয়না ঘরকে আবিষ্কার করেছে। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের অনেকের পদোন্নতি হয়েছে।

বিশেষ অতিথি খুলনা রেঞ্জের উপ-মহা পরিদর্শক মো. রেজাউল হক বলেছেন, ৭১ গৌরব জাতি সারাজীবন বহন করবে। দীর্ঘ ৫৩ বছরে জমে থাকা বৈষম্য নিরসন করতে পারেনি। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যের ক্ষতকে জাতির সামনে তুলে ধরেছে। তারা আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশের পথ দেখিয়েছে।

বিশেষ অতিথি সাবেক সংসদ সদস্য ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার অ্যাডভোকেট স.ম বাবর আলী বলেছেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় ৭১’র বিজয় অর্জিত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা নতুন পতাকা উপহার দিয়ে বিশ্বে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেন। যোদ্ধারা স্বপ্নের বাংলাদেশ উপহার দেন। অমুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও গৌরব ফিরে আনার প্রচেষ্টা চলছে। তিনি জেলার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশেষ অতিথি সাবেক মেয়র ও মুক্তিযুদ্ধ সংসদের নগর ইউনিটের আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনি বলেছেন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ছিল রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মধ্যবিত্ত পরিবারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাগ্য উন্নয়নের ত্রুটি ছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধের আয়োজন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর পাকিস্তানিরা বাঙালিদের হাতে শাসনভাগ দিতে চাইনি, চক্রান্ত চালায় বাঙালি যেন সংবিধান রচনা না করতে পারে। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট এর মাধ্যমে পাকিস্তানিরা বাঙালির রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট করতে চেয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামের আমির স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে অসত্য কথা বলেছেন। সত্যকে তিনি লুকিয়েছেন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলেন। অনুশোচনা না করা ঈমানদার ব্যক্তির কাজ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শহীদ শেখ সাকিব রায়হানের মা বেগম নুর নাহার এ অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার চেয়েছেন।

অনুষ্ঠানে এ প্রতিনিধির কাছে যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করেছেন নবপল্লীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মহিউদ্দিন মোড়ল। তিনি বলেন, তিনি তখন ১৬ বছরের তরুণ। তখনকার তরুণ ছাত্রলীগ নেতা নতুন বাজারের স.ম আব্দুস সাত্তারের পরামর্শে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। তিনি পাইকগাছা, কপিলমুনি ও পানখালি যুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের উশালগ্নে ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন পাইকগাছার মরহুম শাহাদাত হোসেন বাচ্চু।

এ প্রতিনিধির কাছে স্মৃতিচারণ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আসাদুল্লাহ। তিনি বলেন, ১৯ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। হিসাব উদ্দিন আহমেদের পরামর্শে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের বসন্তপুর, খুলনার ডুমুরিয়া ও খর্ণিয়ার যুদ্ধে অংশ নেই। প্রথমদিকে এ দলের অধিনায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ এবং পরের অধিনায়ক ছিলেন কুতুবুদ্দিন আহমেদ।

এ অনুষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাইফ নেওয়াজ, মো. মিরাজ হোসেন, রাইসা, মো. শহিদুল, মো. রিয়াজুল ইসলাম ফাইন, মো. সৈকত, মো. সিয়াম, অংকন, আশরাফুল ও মিরাজুল ইসলাম ইমন অংশ নেন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!