চলতি সপ্তাহেই গঠন করা হচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি))। আগামী বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সার্চ কমিটির প্রস্তুত করা সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হবে। এরপর সেই তালিকা থেকেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
তবে এই সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের গেজেট প্রকাশ না হলেও আগামী সপ্তাহের শুরুতেই তা প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। আইন অনুযায়ী- সার্চ কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার ১৫ কার্যদিবস তথা ২১ নভেম্বরের মধ্যে নতুন ইসি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন করে রং করা হচ্ছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে গাড়ি।
সূত্র জানিয়েছে, ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটির কাছে জমা হওয়া আট শতাধিক নামের তালিকা থেকে ২৭৫ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। একই ব্যক্তির নাম বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল, সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার আসায় নামের তালিকা আট শতাধিক হয়েছিল। সেই তালিকা যাচাইবাছাই করে একাধিকবার আসা নামগুলো থেকে একটি করে নাম রেখে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা সার্চ কমিটির কাছে জমা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেই তালিকা আরও সংক্ষিপ্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে সার্চ কমিটি। দু-এক দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা প্রস্তুত করবে সার্চ কমিটি। এরপরে সেই ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
সংক্ষিপ্ত তালিকায় যাদের নাম স্থান পাচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে শূন্য রয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রক্রিয়া চলছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের। তবে কে হবেন চতুর্দশ প্রধান নির্বাচন কমিশনার? কারা হবেন কমিশনার? সেই আলোচনা এখন দেশজুড়েই। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন এখন সরগরম। তবে নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনের নাম জানতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে।
সুত্র জানিয়েছে, বিএনপিসহ ১৭টি দল ও জোট; পেশাজীবী সংগঠন এবং অনেকে ব্যক্তিগত ভাবেও নাম জমা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। আইন অনুযায়ী আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে। তবে এবারও কমিশনে সিইসি ও চারজন নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজন থাকবে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন সিইসিসহ তিনজনের নির্বাচন কমিশন হলেই ভালো। আবার কেউ বলছে বিগত তিন নির্বাচন কমিশনের মতোই সিইসি ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কথা। এ নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সুশীল সমাজ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিচারক, শিক্ষক, সিনিয়র সাংবাদিক, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীর নাম এসেছে।
নভেম্বর মাস শেষ হওয়ার আগইে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে। এ আইনের অধীনে ২০২২ সালের নির্বাচন কমিশনই প্রথম নিয়োগ পেয়েছিল। সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাব করতে গত ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি।
বিচারপতি জুবায়ের ছাড়াও এই কমিটিতে প্রধান বিচারপতি মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান। আইন অনুযায়ী, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান (পিএসসি) মোবাশ্বের মোনেম পদাধিকার বলে সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন। আর রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে সার্চ কমিটিতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম।
খুলনা গেজেট/এইচ