অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছর হওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সঠিকভাবে গণমাধ্যমে আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা চার বছর মেয়াদের কথা বলেছেন নির্বাচিত সরকার প্রসঙ্গে, অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে এ কথা বলেননি।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের মেয়াদ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দেন তার ব্যাখ্যা জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে শফিকুল আলম বলেন, সংবিধান নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে- পার্লামেন্টের মেয়াদ চার বছর যেন আনা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা এই মেয়াদের কথা বলেছেন। চার বছরের এই মেয়াদ কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বলেননি। তখন আল জাজিরা জিজ্ঞেস করল যে, আপনার (অন্তর্বর্তী সরকার) ক্ষেত্রেও কি চার বছর নাকি। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) পরিষ্কার বললেন, চার বছরের কম। আল জাজিরায় দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকার সঠিকভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসেনি বলেও হতাশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘সতিক্যার অর্থে কী, ভালোমন্দ জিনিসটা না শুনে অনেকে হেডলাইন দিয়ে দিচ্ছে।’
শফিকুল আলম বলেন, এখানে চার বছরের কথা কিন্তু বলা হয়নি। চার বছরের রেফারেন্সটা আসছে, কিছুদিন আগে সংবিধান সংশোধনীতে কারও কারও ডিমান্ড ছিল যে, পার্লামেন্টটা চার বছর হোক। সেই আলোকে একটা (নির্বাচিত) গভর্নমেন্টের ক্ষেত্রে এটা আসছে। এটা নট টু দ্য ইনটেরিম গভর্নমেন্ট।’ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। সংস্কার কমিশনে মাঠের কোনো সাংবাদিক নেই বলেও অভিযোগ ওঠে। যে ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে তাদের বেশির ভাগ সম্পাদক বা সম্পাদক শ্রেণির। সাংবাদিকদের বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে এই শ্রেণিটি বাধার সৃষ্টি করে বলেও অভিযোগ করা হয়।
এ ছাড়া ২০১৩ সালে ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের পর আর কোনো ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন হয়নি বলেও অভিযোগ করেন প্রশ্নকারী সাংবাদিক। সম্পাদক শ্রেণির ঊর্ধ্বতন সাংবাদিকদের কারণে মাঠের সাংবাদিকদের বঞ্চনার কথা সংস্কার কমিশনে সঠিকভাবে উঠে আসবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া কমিশনের তিনজন সদস্য গীতিআরা চৌধুরী, টিটু দত্ত এবং জিমি আমিরের নাম উল্লেখ করে বলা হয় তারা মুজিববাদী। এই কমিশনের মাধ্যমে মুজিববাদকে পুনর্বাসন করা হলো কিনা জানতে চান প্রশ্নকারী সাংবাদিক।
জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধানকে সদস্য নিয়োগে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ফলে এ ধরনের প্রশ্ন কমিশনের প্রধানকেই করা উচিত। এ বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, একটা ব্রডবেইজড প্যানেলকে কমিশনে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জিমি আমির অনেকদিন সাংবাদিকতা করেছেন। মোস্তফা সবুজ, তিনিও মাঠের সাংবাদিক। আর যাদের নেওয়া হয়েছে, তাদের সলিড ব্যাকগ্রাউন্ড আছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
১৬৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিলের প্রজ্ঞাপণে বাতিলের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রায় ৫ হাজার সাংবাদিককে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ১৬০-১৭০ জনের মতো সাংবাদিকের কার্ড বাতিল করা বেশি কিছু নয়। গত সরকারের সময় অনেক দলীয় কর্মীকে সাংবাদিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারা এবং এই কার্ডের অপব্যবহারকারী সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদবিরসহ নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এখন যাদের কার্ড বাতিল হয়েছে, তারা যদি মনে করেন তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, তবে তারা নতুন করে কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, প্রশাাসনে যাদের ডায়নামিক বিবেচনা করা হচ্ছে তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার ১০০ দিনের ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় বিএনপি মহাসচিব আশাহত হয়েছেন বলে যে মন্তব্য করেছেন, এ প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, উনি (বিএনপি মহাসচিব) উনার মতামত দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা আগেই নির্বাচনের রূপরেখা দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম নিয়ে টিআইবির পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে শফিকুল আলম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য কমাতে। সরকারের চেষ্টার পর ডিমের দাম কমেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, অনেক সমস্যা আছে, যেটা এক দিনে শেষ হয় না। শ্রম সমস্যা দীর্ঘদিন ছিল। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে ১৮ দফা চুক্তি করেছি। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রেস সচিব বলেন, আপনারা শান্ত হোন। সবার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়টির সমাধান আসবে বলে তিনি আাশা প্রকাশ করেন।
খুলনা গেজেট/এইচ