গল্লামারী ব্রিজ নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন ও যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে খুলনা নাগরিক সমাজের নেতারা। তারা বলেছেন, অতি দ্রুত এ প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে খুলনা নাগরিক সমাজ প্রয়োজনে সর্বস্তরের নাগরিকদের সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে।
শনিবার (০২ নভেম্বর ) বেলা ১১টায় ব্রিজ সংলগ্ন সড়কে (পূর্ব পাড়ে) সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আ ফ ম মহসীন, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব অ্যাডঃ মোঃ বাবুল হাওলাদার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গল্লামারী ময়ূর নদের উপর ইতোপূর্বে একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে কিছুটা এগিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত রয়েছে। বলা চলে, কাজটি বর্তমানে পতিত অবস্থায় রয়েছে। উপরন্তু, ব্যস্ততম এলাকার সড়কের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা ঘিরে আটকে রেখে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রেখে সমগ্র এলাকা জুড়ে অচল অবস্থা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, একদিকে যেমন যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গল্লামারী এখন একটি অসহ্য যন্ত্রণার নাম।
এতে আরো বলা হয়, যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ আমলে ময়ূর নদের উপর নির্মিত ব্রিজটির পাশে ২০১৬ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, যার নকশা মারাত্মক অপরিকল্পিত। ময়ূর নদ রক্ষা, নৌযান চলাচল প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে সম্পূর্ণ আনাড়ি কায়দায় ব্রিজটি নির্মাণ আমাদের রীতিমত হতবাক করেছে। প্রকৌশলী, নকশাবিদদের প্রকৌশল ও পেশাগত জ্ঞান সম্পর্কে জনসাধারণ বিস্মিত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তখনই ঐ প্রকল্পটির বিরোধীতা করলেও কর্তৃপক্ষ তাদের তৎকালীন খুঁটির জোরে সবকিছুকে থোড়াই কেয়ার করে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। অথচ মাত্র ৩/৪ বছরের ব্যবধানে সেটি ভেঙ্গে দুই লেন বিশিষ্ট নতুন ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমরা আপনাদের মাধ্যমে পূর্বের ব্রিজটির নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহিতা ও আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুুখী দাঁড় করিয়ে রাষ্ট্র তথা জনগণের অর্থ অপচয়ের শাস্তি হিসেবে সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
দুই লেন বিশিষ্ট প্রতি লেন ৬৮.৭০ মিটার দৈর্ঘ্যরে, ১৩.৭০ মিটার প্রস্থের এবং পানির স্তর থেকে ৫ মিটার উচ্চতার প্রায় ৬৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পে কাজ ’২৩ সালের শেষের দিকে শুরু হলেও আচমকা থমকে যায়। ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে যার কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্মাণ কাজ এভাবে পতিত অবস্থায় থাকলে যেমন ইতোপূর্বের সম্পন্ন কাজ এবং ফেলে রাখা নির্মাণ সামগ্রী অবচয় ও অপচয়ের মাধ্যমে ব্রিজটি আয়ুষ্কাল হারিয়ে নির্ধারিত স্থায়িত্ব হারাবে। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাতে প্রকল্প ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। এ কাজের জন্য দাপ্তরিক প্রক্রিয়ার আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও মারাত্মক। সার্বিক বিবেচনায় নির্মাণ কাজ ঝুঁলে গেলে এটি সম্পন্নের ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। আমরা আপনাদের মাধ্যমে খুলনা মহানগরসহ এ অঞ্চলের জন্য অতীব জরুরী এ ব্রিজটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্নের নিমিত্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক নিতাই পাল, জননেতা শেখ মফিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান বাবু, কবি ও সাংবাদিক আবু আসলাম বাবু, আইন ও অধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এস এম দেলোয়ার হোসেন, খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (কেডিএস)এর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিমুল, কে এইচ ফাউন্ডেশনের খ ম শাহীন হোসেন, কবি নাজমুল তারেক তুষার, অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা, অ্যাড. মেহেদী হাসান, মীর মোহাম্মদ কবির হোসেন, মাহফুজ চৌধুরী লোটন, রিয়াজুল ইসলাম রানা, নাজমুল হাসান প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/কেডি