ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সারা দেশে চলছে বৃষ্টির ঘনঘটা। সকাল থেকে মিরপুর শেরে বাংলার আকাশেরও মন ভার। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে সেটি মাথায় নিয়েই ব্যাট হাতে লড়ে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ-জাকের আলী অনিক। সপ্তম উইকেটে দুজনের ১৩৮ রানের রেকর্ড জুটিতে ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা কাটিয়ে শত রানের লিডের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর বৃষ্টির বাধায় দ্বিতীয় সেশনের অনেকটা সময় খেলা বন্ধ থাকার পর তৃতীয় তথা শেষ সেশনে ৫ ওভারের বেশি বল মাঠে গড়ায়নি। আলোক স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা সমাপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
দিনের খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ২য় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৮৩ রান। লিড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ রানের। ১৭১ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অন্যপ্রান্তে নাইম হাসান ২৮ বলে ১৬ রানে টিকে আছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) চতুর্থ দিনে ১৫ মিনিট এগিয়ে ৯টা ৪৫ মিনিটে খেলা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও কালও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে মিরপুরে শুরুতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর প্রোটিয়াদের বড় লিডে চাপা পড়ে টাইগাররা। ইনিংস হার এড়াতে দ্বিতীয় ইনিংসে অন্তত ২০২ রান করতে হতো স্বাগতিকদের। দলীয় ৪ রানের মাথায় পরপর ২ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ইনিংস হারের শঙ্কা ভালোভাবেই জেঁকে বসেছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে গতকাল শেষ বিকেলে মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকের পাল্টা প্রতিরোধে লড়াইয়ে ফেরে স্বাগতিকরা।
আজ তৃতীয় দিনের সকালটা ছিল রীতিমতো দুঃস্বপ্নের। ৭ ওভারেই টাইগারদের উইকেটের পতন হয় ৩টি। স্কোরবোর্ডে ১২ রান তুলতেই ফিরে যান আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিক। ব্যর্থ হন লিটন দাসও। আবারও ইনিংস হারের শঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছিল। অবশ্য এবার প্রতিরোধের নতুন গল্প লিখলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকের আলী অনিক। মেঘের অন্ধকারে আলোর ঝলক দেখা গেল দুজনের ব্যাটে।
সপ্তম উইকেটে এ দু’জন ২৪৫ বলে ১৩৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটেই এ জুটি সর্বোচ্চ। দুজনই ব্যক্তিগত ফিফটির দেখা পেয়েছেন। কেশভ মহারাজের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে জাকের আলী ব্যক্তিগত ৫৮ রানে ফিরে গেলেও নাঈমকে নিয়ে লিড বাড়ানোর চেষ্টায় আছেন ৮৭ রানে অপরাজিত মিরাজ।
এর আগে দিনের শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। আগের দিন অপরাজিত থাকা মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল হাসান জয়ের ওপর নির্ভর করছিল এই টেস্টে বাংলাদেশের ভাগ্য। তবে হতাশ করেছেন তারা।
উইকেটের পেছনে কাগিসো রাবাদার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জয়। এক বল পরই রাবাদার ইনসুইং বলে বোকা বনে বোল্ড হন মুশফিক। টেস্টের প্রথম ইনিংসেও মুশফিক অবশ্য একইভাবে বোল্ড হয়েছিলেন। মুশফিক ৩৩ রানে থামেন, এর আগে ৪০ রানে বিদায় নেন জয়। মিরপুরে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় ক্রিজে ভরসা হয়ে ছিলেন লিটন দাস এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।
কিছুক্ষণ পরই অবশ্য লিটন দাস বিদায় নিয়েছেন। কেশব মহারাজের সুইং করা বল লিটনের ব্যাট-গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক কাইল ভেরেইনার হাতে। জোরালো আবেদন করেননি কেউই। ভেরেইনার জোরাজুরিতে নিতান্ত অনিচ্ছায় এইডেন মার্করাম নিলেন রিভিউ। তাতেই আউট হন লিটন।
এর পরের সময়টা জাকির আর মিরাজের।
দলের প্রয়োজনে আরও একবার ব্যাট হাতে ত্রাতা হয়েছেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি তুলে নিয়ে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির পথে আছেন। সফরকারী প্রোটিয়াদের কতটা টার্গেট দিতে পারে বাংলাদেশ, এটাও নির্ভর করছে মিরাজ কতক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেন তার ওপর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৬
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩০৮
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৮৫ ওভারে ২৮৩/৭
খুলনা গেজেট/এএজে