মরহুম এম নুরুল ইসলাম দাদুভাই ছিলেন খুলনা অঞ্চলের রাজনীতির মহানায়ক উল্লেখ করে খুলনা বিএনপি আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতি পর্যন্ত তিনি সবসময় ছিলেন জনগণের পক্ষে। দেশ ও দশের প্রতি সহমর্মী এই মানুষটি সবসময় নিজ আদর্শে ছিলেন অবিচল। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কল্যাণে গণমানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ এবং গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণমূখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছিল দাদুভাইয়ের রাজনীতির মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন আজীবন। আজীবন সংগ্রামী এই নেতা নিষ্ঠুর নির্যাতন সহ্য করেও কঠিন সিদ্ধান্তে অটুট থাকতেন। তাঁর রাজনীতি দলীয় নেতাকর্মীদেরকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাবে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বাদ আসর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয় খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনের মহানায়ক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সৈনিক এম নূরুল ইসলাম দাদু ভাই’র ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে মরহুমের রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের আন্দোলনে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মরহুম নুরুল ইসলামের অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর কর্মময় জীবনের সাফল্যের মূলে ছিল আদর্শনিষ্ঠ উদ্যম ও উদ্যোগ। জনঘনিষ্ঠ ও কর্মীবান্ধব রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণেই তিনি জনগণ ও দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের জাতীয়তাবাদী দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সাহসী সংগ্রামে মরহুম এম নুরুল ইসলামের অবদান দল ও দেশবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আলোচনা শেষে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শেখ সাদীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, ফকরুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, রেহেনা ঈসা, বদরুল আনাম খান, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, জাহিদুল ইসলাম, কে এম হুমায়ুন কবির, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, হাসানউল্লাহ বুলবুল, আফসার মাষ্টার, একরামুল কবির মিল্টন, আব্দুর রহমান ডিনো, মজিবর রহমান, আলী আক্কাস, আজিজা খানম এলিজা, ইস্তিয়াক আহমেদ ইস্তি, জাহিদুল ইসলাম, রিয়াজ শাহেদ, নেহিমুল ইসলাম নেহিম, সালাউদ্দিন বুলবুল, আব্দুল আজিজ সুমন, সওগাতুল সগীর, জাহাঙ্গীর, আসলাম, জাহিদুর রিপন, শেখ জাকির, মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল, আসিফ, শেখ জাকির, জালালউদ্দিন, আনোয়ার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চার বছর আগে ২০২০সালের এইদিনে খুলনার সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। মৃত্যুকালে নুরুল ইসলাম তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য, আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ভাষাসংগ্রামী এম নূরুল ইসলাম দাদু ১৯৩৪ সালের ২ মে খুলনা মহানগরীর ২০ বাবুখান রোড এলাকায় সম্ভ্রন্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডা. খাদেম আহমেদ এবং মা আসিয়া খাতুন। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পাস করার পর ছাত্রজীবনে নিখিল বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগের খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৯৫২ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্ত ফ্রন্টে, ১৯৫৭ সালে ন্যাপের খুলনা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬২ সালে খুলনার জাহানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ১৯৬৮-৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দান, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন, ১৯৭২ সালে ন্যাপের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য, ১৯৭৮ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী যুক্তফ্রন্টে যোগদান, ১৯৭৯ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ২০০১ সালে খুলনা-৪ আসন (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সবার কাছে ‘দাদু’ নামে পরিচিত ছিলেন। – খবর বিজ্ঞপ্তির।
খুলনা গেজেট/কেডি