খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ পৌষ, ১৪৩১ | ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনার রূপসায় নৈহাটি ইউনিয়নের জয়পুরে সা‌ব্বির না‌মে এক যুবক গুলিবিদ্ধ
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৪১
  রাজশাহীতে বাসচাপায় স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজন নিহত
  দৈনিক জন্মভূমির সিনিয়র রিপোর্টার হারুন অর রশিদ (৫৫) আর নেই

আমি তোমার জম মালাকুল মউত আজরাইল

হাফিজ মাছুম আহমদ

মৃত্যুর অপর নাম মরণ, অর্থাৎ জীবন অবসান। আরবী ভাষায় মৃত্যুকে ইন্তেকাল ও মাওত বলে। ইন্তেকাল অর্থ স্থানান্তর, প্রত্যাবর্তন ও পরলোক গমন। আমরা প্রতিনিয়ত শহরে বন্দরে, হাটে, বাজারে, গ্রামে-গঞ্জে মাইক যোগে শুনতে পাই অমুক গ্রামের বা মহল্লার অমুকের পুত্র বা অমুক ইন্তেকাল করেছেন। এই ইন্তেকাল থেকে কেহই নিস্তার পাবেন না। আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দাগণ, নবী-রাসুল, সাহাবী, পীর-অলি, উলামা-মাশাইখ, কোরআনে হাফেজ, মুফাসসির-মুহাদ্দিস সহ রাজা-প্রজা, আস্তিক-নাস্তিক, রাজনৈতিক-সামাজিক, বিচারক-সৈনিক, গবেষক-বৈজ্ঞানিক, কৃষক-শ্রমিক তথা সর্বস্তরের বনী আদমের জন্য মৃত্যুই অলঙ্ঘনীয়। জগতে প্রত্যেক বিষয়ের বিপরিতে অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু মৃত্যুর বিপরিতে কেহ কিছু বলতে পারে না। নির্দ্বিধায় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মৃত্যুকে সকলেই মাথা পেতে বরণ করতে হয়।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে ইর্শাদ করেছেন সমস্ত জীবই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে (সুরা আলে ইমরান ১৮৫)।

অন্যত্র ইর্শাদ করেছেন:“মৃত্যুর সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই”(সুরা জুমআ ৮)। আরোও ইর্শাদ করা হয়েছে :“অবশ্যই তোমরা মৃত্যুবরণ করবে”(সুরা মু’মিনুন ১৫)। মহান আল্লাহর আরোও ইর্শাদ “তোমরা যেখানেই থাকনা কেন ,মৃত্যু তোমাদের পেয়ে যাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো” (সুরা নিসা ৭৮)। আল্লাহর আরোও ইর্শাদ রয়েছে: “আল্লাহর আদেশে লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেউই মৃত্যু মুখে পতিত হয় না” (সুরা আলে ইমরান ১৪৫)। আরোও ইর্শাদ রয়েছে “নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হবে, আল্লাহ তখন কাউকে অবকাশ দেবেন না” (সুরা মুনাফিকুন ১১)।

মৃত্যু কখন কি ভাবে কোথায় হবে, তা আলিমুল গাইব আল্লাহ পাকই জানেন। কারও মৃত্যু হয় জন্মের পর, ১ ঘন্টা পর, এক সপ্তাহ পর, ১ মাস পর, ১ বছর পর, শত বছর পর। স্বাভাবিক অবস্থায়, নামাযরত অবস্থায়, ঘুমন্ত অবস্থায়, অসুস্থ অবস্থায়, আঘাত প্রাপ্ত অবস্থায় ও বিভিন্ন মহামারীতে। নিজ ঘরে, রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে, জলে ডুবে, পর্বতে আরোহণ করে ও খন্দকে মাঠি চাপায়। তাই মৃত্যুকে ভয় করতে নাই। বরং আলিঙ্ঘনের জন্য সর্বদা সানন্দ চিত্তে প্রস্তুত থাকতে হবে।

কুরানের শ্রেষ্ঠ কাহিনী গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, এক সময় একাধারে সাত শত বছর বনী ইসরাইল মধ্যে কোন নবীর আবির্ভাব হয় নাই, এই সময়ের মধ্যে তাদের কোন রোগ ব্যাধি হয় নাই এবং কেহ মৃত্যু বরণও করে নাই। তাই মৃত্যুর ধারণাই তাদের ছিল না। তারা ছিল মূর্তি পূজারী। তাদের বাদশাহর নাম ছিল তাইফুর বিন তুগইয়ান।সেই যুগে হযরত হানযালা (আঃ) কে নবুওতী দান করে আল্লাহ পাক তাদের মধ্যে প্রেরণ করলেন। তিনি তাদেরকে মূর্তি পূজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর উপাসনা করার জন্য অনেক বুঝালেন, তারা নবীর কথা মানল না।সিরিয়া রাজ্যের একটি উচুঁ মিনারে আরোহন করে হযরত হানযালা (আঃ) লোকজনকে সত্যের পথে আহ্বান করতেন। পথভ্রষ্ট বনী ইসরাইল সেই আওয়াজে বিরক্তি বোধ করত। তারা বাদশাহর দরবারে তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করল।

বাদশাহর হুকুম হল তোমরা তাঁকে হত্যা করে ফেল। রাত্রে হানযালা (আঃ) ঐ রকম উচ্চস্বরে বললেন হে বনী ইসরাইল! তোমরা মূর্তিপূজা পরিহার কর, এক আল্লাহর উপাসনা কর, নতুবা আগামীকাল তোমাদের উপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে। তারা তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না।পরদিন সকাল থেকে দুপুরের মধ্যেই মহামারীতে দুই হাজার লোক মারা গেল, এতে তারা হতভম্ব হয়ে বাদশাহর দরবারে গিয়ে বলল- জাহাপনা! আজ অর্ধ দিবসেই প্রায় দুই হাজার লোক মৃত্যুবরণ করেছে।

বাদশাহ বলল- হানযালার আওয়াজে এরা ঘুমাতে পারে নাই, এখন নিদ্রা মগ্ন হয়েছে, তারা মরে নাই। বাদশাহর কথায় তারা ফিরে গিয়ে মৃতদের কে হাঁক ডাক ও শরীরে ধাক্কা দিল। মৃতরা কিছুতেই সাড়া দিল না। পুনরায় তারা বাদশাহর কাছে গিয়ে এসব বলল- এতে বাদশাহর অন্তরে কিছুটা মৃত্যুর ভয় সঞ্চার হল। তাই মৃত্যু থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য একটি কেল্লা তৈরী করল। যার বার হাজার তোরণ ছিল। প্রত্যেক তোরণে দুইজন প্রহরী নিযুক্ত করে নির্দেশ দিল তোমরা সর্বদা শতর্ক থাকবে যেন মৃত্যু কেল্লার ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। দুর্গের মধ্যখানে দুর্ভেদ্য লৌহ কক্ষ নির্মাণ করে তার দ্বারে কয়েক হাজার প্রহরী মোতায়েন করে এর ভিতরে সে অবস্থান করত এবং গর্বভরে বলত! এবার দেখা যাবে মৃত্যু আমাকে কি করতে পারে? অনন্তর গম্ভুজ ভেদ করে বিকট এক মূর্তি বাদশাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তাঁর ভীষণ আকৃতি দেখে বাদশাহ ভয়ে বিহ্বল হয়ে বল্ল তুমি কে? আগন্তুক একটু মুচকি হেসে বললেন আমি তোমার জম মালাকুল মউত আজরাইল। প্রকম্পিত স্বরে বাদশাহ জিঙ্গেস করল, এখানে কি উদ্দেশে আগমন? আজরাইল বললেন তোমাকে আমার পরিচয় দিতে এসেছি। এই বলে তিনি চলে গেলেন। বাদশাহ প্রহরীদের শাস্তি দিয়ে নতুন প্রহরী নিযুক্ত করল। পরদিন আজরাইল এসে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাদশাহর জান কবজ করে চলে গেলেন। যাবার সময় এমন একটি বিকট আওয়াজ দিয়ে গেলেন, যাতে বার হাজার গোলামসহ সকল প্রহরী মুহূর্তেই প্রাণ হারাল।

মৃত্যু থেকে যখন কেউ রক্ষা পেতে নাই, তাহলে আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদেরকে মৃত্যুর আগে আগে মৃত্যুর ছামানা যুগার করার তাওফিক দান করেন আমীন।

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!