খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

নেতা জনগণের শাসক নাকি সেবক?

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী

নেতা হলো জনগণের সেবক, শাসক নয়; রক্ষক, ভক্ষক নয়। হাদিসে আছে, যে জনগণের সেবক হয়, সে নেতা হয়। নেতা সব সময় জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে, জনগণের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকবে। রসুল (স.) বলেছেন, এমন আমির বা নেতা যার ওপর শাসনক্ষমতা অর্পিত হয়, অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহপাক তাকে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না (সহিহ মুসলিম)।

আজ চারদিকে চলছে নেতা পরিবর্তনের হাওয়া। আমাদের কাছে ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে নেতা অর্থই হলো রাজনৈতিক নেতা। এইজন্য অনেকের এ কথা বলতে শোনা যায় যে আমাদের নেতাদের কথা-বার্তার ঠিক নেই, চরিত্র ঠিক নেই, আমানতদারী নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নেতার ব্যাপক অর্থ হলো, এমন কোন ব্যাক্তি যার কথা অনেকে শোনে, অথবা যার অধীনে বেশ কয়েকজন কিংবা অনেকে থাকেন। এই অর্থে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কোন না কোন পর্যায়ের নেতা। কেও পরিবারের নেতা, কেও দলের নেতা, কেও সমাজের নেতা, কেও অফিসের নেতা, কেও বা আবার দেশের নেতা । ইসলামে নেতা কোন ক্ষমতা নয়; এক জিম্মাদারি বা দায়িত্বভারের নাম। এই জন্যই হয়ত সর্বশ্রেষ্ট মহামানব মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নেতা অনেকটা গাড়ির ড্রাইভারের মতো। সে যদি গাড়ি ভালো চালায়, তাহলে সবাই তাদের গন্তব্যস্থানে নিরাপদে পৌঁছাইতে পারবে। আর যদি ওল্টোপাল্টা চালায়, তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। একজন আদর্শ নেতার অনেক গুণাবলী থাকা দরকার।

খারাপ চরিত্রের মানুষ কখনও ভালো মানুষ হতে পারে না।অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ তার জনপ্রতিনিধির দ্বারা প্রভাবিত হয়। তার রুচি ও অভ্যাসের প্রভাব তার অধীনস্থদের উপরে পড়ে। তাই জনগণের উচিত, জনপ্রতিনিধি হিসেবে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া।মহানবী (স.) বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র ভালো সেই তোমাদের মধ্যে সব চাইতে উত্তম।

আদর্শ নেতা হতে হলে তাকে অবশ্যই সত্যবাদী ও মুত্তাকি হতে হবে। সৎ মানুষ ছাড়া একটি সুষ্ঠ-সুন্দর জাতি আশা করা যায় না। হাদিসে আছে, সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংশ করে। যার মধ্যে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় নেই, যে সত্যবাদী নয়, সে কখনো জনগণের কল্যাণে আসতে পারে না। রসুল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তায়ালা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। বর্ণনাকারী আবু মুআবিয়া বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি(সহিহ মুসলিম)।

আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা আদর্শ নেতা হবার পূর্বশর্ত। জনগণের মধ্যে আমানতদারী না থাকলে মানুষ দূর্নীতি পরায়ণ হতে বাধ্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, আর যখন সে ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তাতে খিয়ানত করে।মানুষের প্রতিনিধিত্ব একটি আমানত। এর যথাযথ হক আদায়ের জন্য তার মধ্যে আমানত রক্ষার যোগ্যতা থাকতে হবে। তা না হলে এটিই তার জন্য লাঞ্ছনার কারণ হবে। আবুযার (রা.) বলেন, আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসুল (স.), আপনি কি আমাকে প্রশাসক পদ প্রদান করবেন? তিনি তখন তাঁর হাত দিয়ে আমার কাঁধে আঘাত করে বলেন, ‘হে আবুযার, তুমি দূর্বল, অথচ এটি হচ্ছে একটি আমানত। (দায়িত্ব আদায়ে অবহেলা হলে) আর কিয়ামতের দিন এটা হবে লাঞ্ছনা ও অনুশোচনা। তবে যে এর হক সম্পূর্ণ আদায় করবে তার কথা ভিন্ন’(সহিহ মুসলিম)। (লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!