রাজনৈতিক ডামাডোলে স্থবির হয়ে পড়েছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম রবি হত্যা মামলার তদন্ত। গত ২ মাসেও মামলাটির তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাই গ্রেপ্তারও হয়নি, উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র। হত্যার কারণও এখন পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নিহতের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।
গত ৬ জুলাই রাতে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইউপি চেয়ারম্যান রবি নিহত হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী শায়লা ইরিন বাদী হয়ে ৭ জুলাই ডুমুরিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে হত্যার কারণ হিসেবে বাদী উল্লেখ করেন, এজাহারভুক্ত ১ নং আসামি উবাঈদের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমার স্বামী রবি ৩ বার শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আমার স্বামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সমর্থন করলে ১নং আসামি নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করে। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে আমার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা গাজী এজাজকে সমর্থন করে। আর ১নং আসামি ৫নং আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী তারা বিশ্বাসের পক্ষে কাজ করে এবং তারা বিশ্বাস পরাজিত হয়।
আমার স্বামীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। ১ নং আসামি উবাঈদ বারবার পরাজিত হয়ে ৫ নং আসামি তারা বিশ্বাসের অর্থায়নে ভাড়াটিয়া খুনিদের দিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জুলাই মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নং আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিশ্বাস প্রোপার্টিজের মালিক মো. আজগর বিশ্বাস তারা এবং সন্দেহভাজন আসামি সাইফুল ইসলাম সরদার ওরফে কিলার বাবুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই দিন তারা বিশ্বাসের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে তার অস্ত্রের লাইসেন্স, লাইসেন্স করা শটগান, ৫৭ রাউন্ড গুলি, ৯ রাউন্ড গুলির খোসা জব্দ করে। পরদিন ৯ জুলাই তাদেরকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ১১ জুলাই তারা বিশ্বাসের অফিস ও বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজের কম্পিউটার হার্ডডিস্ক জব্দ করে।
এছাড়া ৮ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় মামলার এজাহারভুক্ত ৭ নং আসামি মো. আল ফোরকান খানকে। তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আসামিরা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা কিংবা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য দিয়েছে কিনা তা এখনও রহস্যাবৃত রয়েছে। তবে গ্রেপ্তার ৩ আসামির কেউ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এইচ এম উবাঈদ উল্লাহ ও তার ভাই ওয়ালী উল্লাহ অলি, মো. আল মামুন সানা, মো. রফিক শেখ, মো. আলামিন শেখকে পুলিশ প্রথম দিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এর মধ্যে উবাঈদ একাধিকবার ইউপি নির্বাচনে রবির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এছাড়া কারা এবং কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী শায়লা ইরিন বলেন, পুলিশ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানাচ্ছে না। সে কারণে অগ্রগতি জানা নেই।
নিহতের ভাগনে সাইফুর রহমান রাজু বলেন, মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটির ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। উচ্চ আদালত থেকে ২ আসামি ৮ সপ্তাহ এবং ৩ আসামি ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেছে। গ্রেপ্তার হওয়া তারা বিশ্বাসও জামিনে বেরিয়েছে।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া থানার ওসি এম এ হক জানান, মামলাটিতে এ পর্যন্ত ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। কয়েকজন আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও হত্যার কারণ উদঘাটনে তারা কাজ করছেন।
খুলনা গেজেট/হিমালয়