নাক ঝাঁঝালো তীব্র গন্ধ। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা। স্তরে স্তরে জমে থাকা পলিথিন। এর ভিতর আবার মল মূত্র ত্যাগ।শ্বাস নেওয়ার জো টুকু নেই। মিনিট খানিক নাক কুঁচকে শ্বাস বন্ধ করে না হাঁটলে বমি অবধারিত।
কথা বলছি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দক্ষিণ দিকের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন খুলনা সাতক্ষীরা রোডের। খুলনা সার্বিক চিত্র এটি। শহরের বিভিন্ন স্থানে এমন অবস্থা চোখে পড়বে প্রতিনিয়ত।
আবাল বৃদ্ধা বনিতা যখন সারাদিনের কর্ম ক্লান্তি দূর করতে চারদেয়ালের ভিতর থেকে বেরিয়ে এক টুকরো প্রশান্তির খোঁজে যখন মুক্ত প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাস বুক ভরে নিতে বের হয় তখন শহরবাসীকে মুখোমুখি হতে হয় এই তীব্র দুর্গন্ধের।
চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রেন্টমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ) নামক একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে বায়ু দূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সীসা দূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি অকালমৃত্যুর কারণ। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৩ এ বায়ুদূষণে দেশ হিসেবে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশে এবং নগর হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ছিল ঢাকা।
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা আসলে একটা বোধ এবং একটা চর্চা। চিন্তা এবং আচরনে এই বোধ না জন্মালে এর চর্চার সুযোগ থাকে না। কিন্তু এক্ষেত্রে এই চিন্তা এবং চর্চার সঠিক সমন্বয় ঘটিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রোটারেক্ট ক্লাব অফ খুলনা ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে আয়োজিত “কিপ ইট ক্লিন, মেক ইট গ্রীন” ইভেন্টের অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে জমে থাকা ঐসব আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। এছাড়া গল্লামারী বাজার এলাকার আবর্জনা পরিষ্কার অভিযান এর কিছু অংশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে। ভবিষ্যতে যেন এখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলা হয় সে বিষয়ে গল্লামারী বাজার সমিতির সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোটারেক্ট ক্লাব অফ খুলনা ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট অজয় মজুমদার খুলনা গেজেটকে বলেন,”খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা সমস্যার সমাধানে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এরই উদ্যোগে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে অবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করা হয় এবং জায়গাটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি এবং কাজ এখনও চলমান আছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিহিত থাকে জীবনের গান। কাজেই আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সোচ্চার হই। নিজেদের আশে-পাশের পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি। নিজেরা ময়লা না ফেলি, অন্যকে ময়লা ফেলতে নিরুৎসাহিত করি।”
খুলনা গেজেট/এএজে