দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের অপসারণের পর সব সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
অপসারিত মেয়ররা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে রেজাউল করিম চৌধুরী, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে তালুকদার আব্দুল খালেক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে ইকরামুল হক টিটু, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে তাহসিন বাহার সূচনা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে জায়েদা খাতুন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে রয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।
১২ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে যারা
এদিকে ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তারাই এসব সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন করবেন। সোমবার দুপুরে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ২৫ (ক) এর উপধারা (১) প্রয়োগ করে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১২ কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শের আলীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মাহমুদুল হাসানকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে খুলনা সিটি করপোরেশন, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে সিলেট সিটি করপোরেশন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে বরিশাল সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) মহাপরিচালককে (অতিরিক্ত সচিব) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে রংপুর সিটি করপোরেশন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন প্রশাসক করা হয়েছে।
যে কারণে মেয়র-চেয়ারম্যানদের অপসারণ
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগকে পরিচ্ছন্ন করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা বলেন, পুরনো শাসকের সাথে সম্পর্কিত কাউকে না রাখার যে দাবি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে এ রদবদল। পুরো স্থানীয় সরকার বিভাগকে পরিচ্ছন্ন করার একটা প্রক্রিয়া।
এ এফ হাসান আরিফ বলেন, এই সরকার রুটিন সরকার নয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে একটা বিপ্লবের মাধ্যমে এই সরকার এসেছে। আমরা তাদেরই প্রতিনিধি। ছাত্র-জনতা যে দাবি-দাওয়া কার্যকরের জন্য আমাদের উপর বিশ্বাস রেখেছে সেটার প্রতিনিধি হিসেবে আমরা কাজ করছি।
সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসক থাকলে কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করবে কি করবে না, সেটা এখন তাদের ব্যাপার। মূল হচ্ছে মেয়র-চেয়ারম্যানের জায়গায় প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে রোববার (১৮ আগস্ট) ৮৭৬ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর মধ্যে ৬০ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ৩২৩ জন পৌর মেয়র রয়েছেন।
মৃত্যুজনিত কারণে নাটোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। খালি হওয়া ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ৪৯৫ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগ দিয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এছাড়া ৭টি পৌরসভার প্রশাসককে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরদিন ১৭ আগস্ট এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি।
ওই সংশোধনীর ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।
এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
খুলনা গেজেট/এএজে/এমএম