স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেছেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান। রোববার (১১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে তিনিই এ তথ্য জানান।
মনিরুজ্জামান খুলনা-বরিশাল বিভাগের ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত। তিনি ২০ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা।
স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে করা আবেদন পত্রে তিনি লেখেন, ‘মহান আল্লাহ তার কিতাবের সর্বশেষ পরিপূর্ণ সংস্করণ আল কোরআনের জ্ঞান ও ন্যায়-অন্যায় প্রজ্ঞা দান করায় আমি বুঝতে পারছি যে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে আর চাকরি করা আমার জন্য সমীচীন নয়। এ কারণে অদ্য ১১/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখে আমি পুলিশে আমার পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলাম।’
‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবার আগের কয়েক দিন এবং বিগত ১০ বছরে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে অবৈধ সরকারকে রক্ষার নামে নিজেদের ক্ষমতা ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথকে দীর্ঘায়িত করার মানসে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হিংস্র ও বর্বর আদেশে শিশু-কিশোর সহ বহু মানুষকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা হত্যা করেছে যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী বর্তমানে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলার মানষের ঘৃণার পাত্র হিসাবে আমি পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী করতে ইচ্ছুক নই বিধায় আমি চাকুরী হতে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলাম।’
এ ছাড়া তার ফেসবুকের পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! বিগত ১৭ বছর ধরে পরাধীন দাস থেকে আজকে আমার মহান প্রভু স্বাধীন মানুষে পরিণত করলেন! মহান আল্লাহ আমাকে বিবেক দিয়েছেন বলেই বিসিএস পুলিশ অফিসারদের মধ্যে প্রথম নিরস্ত্র শিশু-কিশোর, ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যাকারী বিগত সরকার টিকে থাকা অবস্থাতেই আমি চাকরি ও মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে সরকারকে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম গণহত্যাকারী হিসেবে অভিহিত করেছিলাম। যা প্রায় এক কোটি মানুষ দেখেছে-শুনেছে।
এর মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছে, ভেবেছে সরকারের নিশ্চিত পতন হবে বুঝতে পেরে আমি পরবর্তী সরকারের নিকট থেকে পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্যই এটা করেছি। আমি মুনাফিক বা ভণ্ড নই। সরকারি অর্থ গরীবের দেয়া ট্যাক্স থেকে আসে; তা আমাকে আল্লাহ বুঝিয়েছেন। এ দরিদ্র দেশে আমার জন্য বরাদ্দ কোটি টাকার গাড়ি, দুজন বডিগার্ড, দুজন ড্রাইভার, অফিসের অর্ডারলি ইত্যাদিসহ মোটা অংকের বেতন ভাতা, সোর্স মানি নেয়া অন্যায় কাজ বলে আমার বরাবরই মনে হয়েছে। তারপরেও আমাকে এসব সুবিধা নিতে হয়েছে। কারণ, আমি একটা বিবেকহীন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে ছিলাম। আজ আমি মুক্ত বিহঙ্গ। আহ কী শান্তি! আল্লাহর পথে স্বাধীনভাবে আমি আজ থেকে কাজ করতে পারব। আলহামদুলিল্লাহ।
খুলনা গেজেট/এইচ