খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
দেশে ফিরে ড. ইউনূস

আপনারা যদি আমার ওপর ভরসা রাখেন, তাহলে কারও ওপর হামলা হবে না

গেজেট ডেস্ক 

অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ছাত্ররা আমাকে আহ্বান জানিয়েছে, তাতে আমি সাড়া দিয়েছি। দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত করেন দেশে কারও ওপর হামলা হবে না। এটা আমাদের প্রথম কাজ। আমার কথা যদি না শোনেন, তাহলে এখানে আমার প্রয়োজন নেই। আমাকে বিদায় দেন। আমি আমার কাজ করি। আমাকে প্রয়োজন হলে আমার কথা শোনেন। আমার প্রথম কথা হলো, সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করুন।

ঢাকায় ফিরে আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার পাশে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এর আগে তারা ড. ইউনূসকে স্বাগত জানায়।

ড. ইউনূস বলেন, আজকে আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজয় দিবস সৃষ্টি করলো, সেটাকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এটা সম্ভব করেছে তরুণ সমাজ, তাদের প্রতি আমার সমস্ত প্রসংশা ও কৃতজ্ঞতা। এরা এ দেশকে রক্ষা করেছে, পুনর্জন্ম দিয়েছে। এই পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেলাম, তা যেন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, এটিই হলো আমাদের শপথ। সেটি আমরা রক্ষা করতে চাই। এটিই আমাদের শপথ।

আন্দোলনের সময় রংপুরে নিহত আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শান্তিতে নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ। বলেন, আজ আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গেছে! তারপর থেকে কোনো যুবক-যুবতী আর হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে। বলেছে, যত গুলি মারতে পারো, মারো, আমরা আছি। যার কারণে এই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। আর বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হলো। এই স্বাধীনতাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। শুধু রক্ষা নয়, এই স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে এই স্বাধীনতার দাম নেই। স্বাধীনতা পৌঁছে দেয়াটাই আমাদের শপথ-প্রতিজ্ঞা।

তিনি আরও বলেন, মানুষ যেন জানে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন, ছেলেমেয়ের ভবিষৎ পরিবর্তন। এটা যেন প্রত্যেকে বুঝে নেয়। দেশ আজকের তরুণ সমাজের হাতে। তোমরা এটিকে মনের মতো করে গড়ে তুলবে। তোমরা যেমন স্বাধীন করেছ, এটিকে তোমরা গড়তেও পারবা। তোমাদের দেখে সারা দুনিয়া শিখবে। আমি তাদেরকে বারেবারে উপদেশ দিই, পুরনোদের বাদ দাও। তাদের পুরনো চিন্তা দিয়ে আমাদের মুক্তি হবে না। এটা কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়াতে হবে না। তোমাদের মধ্যে যে শক্তি ও সৃজনশীলতা আছে, তা কাজে লাগাতে হবে। সৃজনশীলতা বই-খাতায় লেখার জিনিস না, এটা প্রকাশ করার জিনিস, স্থাপন করার জিনিস।

ড. ইউনূস বলেছেন, আমাদের কাজ, দায়িত্বটা হলো তারা (শিক্ষার্থী) যেটা অর্জন করে নিয়ে এসেছে, তাদেরকে দিয়েই সব কাঠামো পরিষ্কার করা। সরকার বলে একটা জিনিস আছে, তাতে মানুষের কোনো আস্থা নেই। মানুষ মনে করে, সরকার দমনপীড়নের একটা যন্ত্র। যেখানে সুযোগ পায়, সেখানে কষ্ট দেয়া… এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে তাদের বুক ফুলে ওঠার কথা। সরকার তাদের রক্ষা করবে। সরকার হবে মানুষের আস্থাভাজন। মানুষ নিজে নিজে বিশ্বাস করবে সরকার রক্ষা করার লোক। তাহলে মানুষও তাতে যোগ দেবে।

সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, সারা বাংলাদেশ একটি বড় পরিবার। আমরা একসঙ্গে চলতে চাই। আমাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ যা আছে, সরিয়ে ফেলতে চাই। যারা বিপথে গেছে তাদেরকে পথে আনতে চাই। যাতে করে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে সহিংসতা-বিশৃঙ্খলা নিয়েও কথা বলেন তিনি। জানালেন, দেশে আসার পথে তিনি শুনেছেন, এখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত হচ্ছে। মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে, অফিস-আদালত আক্রমণ, সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করা হচ্ছে।

তার মতে, এগুলো হলো ষড়যন্ত্রের অংশ। এগুলো তাদের বিষয় না। তাদের কাজ হলো সবাইকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ তাদের ভাই-বোন।

এ নিয়ে ড. ইউনূস বলেছেন, বিশৃঙ্খলা হলো অগ্রগতির শত্রু। আমাদের যে যাত্রা শুরু হলো, এর শত্রু। কাজেই এই শত্রুকে যাতে রোধ করা যায়, বুঝিয়ে হোক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিয়ে হোক, এটা বুঝাতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন হতে হবে, তাদের হাতে দায়িত্ব দিলে এর বিহিত হবে। এটা যেন আবার না হয়, দুইটা টাকা দিলাম, আবার ছেড়ে দেয়া হলো।

বাংলাদেশ খুব সম্ভাবনাময় দেশ হতে পারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুন্দর দেশ হতে পারে। এটাকে আমরা নষ্ট করে দিয়েছি। আবার জেগে উঠতে হবে। আবার বীজতলা তৈরি করতে হবে। তারাই (শিক্ষার্থী-তরুণ সমাজ) এই বীজতলা তৈরি করবে। এখানে সরকারি কর্মকর্তারা আছে। বাংলাদেশ একটি পরিবার। আমাদের মধ্যে যেন কোনো গোলযোগ না হয়। আমরা যেন তড়িৎ গতিতে এগিয়ে যেতে পারি।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!