কোনো মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করলে আদালতে হাজির করে। পরে আদালতে আসামিকে জামিনের আবেদন করতে হয়। আদালতের মাধ্যমে কোনো আসামি জামিন পেলে আদালতে বেল বন্ড জমা দিতে হয়।
বেল বন্ড জমা দেওয়ার সময় পুলিশকে (জিআরও অফিস) ২০০ টাকা বা সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে (পেশকার) কমপক্ষে ২০০ টাকা বকশিশ (ঘুষ) দেওয়ার অলিখিত রেওয়াজ চালু আছে বহুদিন ধরে। এই টাকা তাঁরা চেয়ে নেন। টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় আইনজীবী কিংবা তাঁদের মুহুরিদের। এছাড়া কোন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন , তার কপি তুলতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা ঘুষ নেয়ার নিয়ম চালু রয়েছে।
কিন্তু গত দুই দিন ধরে আদালতের জিআরও কিংবা পেশকার কেউ টাকা নিচ্ছেন না!
ঢাকার শাহ আলী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হুময়ন কবীর রওশন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে ১৬৩ টির বেশি মামলা করা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলা বিশেষ ক্ষমতা আইনে বা বিস্ফোরক আইনে। এসব মামলায় আদালতে জামিন কিংবা হাজিরা দিতে দিতে আমি প্রায় নিঃস্ব! আমি গতকাল (মঙ্গলবার) জামিনে বের হয়েছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা জজ আদালতের একজন মুহুরি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কেউ জামিন পেলে জিআরওকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে আরও বেশি দিতে হয়। এটা তাঁরা (জিআরও বা পেশকার) খুশি করার কথা বলে নেন। টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। দুর্ব্যবহারের শিকারও হতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু গত দুই দিন ধরে টাকা নিচ্ছেন না জিআরও কিংবা আদালতের পেশকারেরা।’
ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী নির্মল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে কোনো আসামি জামিন পেলে বেল বন্ড (জামিননামা) জমা দেওয়ার সময় জিআরও কিংবা পেশকারদের টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু গত দুই দিন ধরে কেউ কোনো টাকা নিচ্ছে না। বেল বন্ড জমা দেওয়ার সময় গত দুই দিন ধরে কেউ আগের মতো আর টাকা চাচ্ছে না।’
পল্টন থানার জিআরও পুলিশের উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর এই তিন থানার মামলায় আজ (বুধবার) ৪১ জন জামিন পেয়েছেন। বেল বন্ড জমা দেওয়ার সময় কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না!’
গুলশানের জিআরও শাহ আলম বলেন, ‘আমি অসুস্থ। গত দুই দিন ধরে কোর্টে যাচ্ছি না। কেউ জামিন পেলে বেল বন্ড জমা নেওয়ার সময় কোনো টাকা পয়সা নেওয়া হচ্ছে না।’
ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘আজও প্রায় ২০০ জনকে জামিন করিয়েছি। বেল বন্ড জমা দেওয়ার সময় পেশকার বা জিআরওরা অন্য সময় টাকা নিলেও গত দুই দিন কোনো টাকা নিচ্ছে না।’
খুলনা গেজেট/এইচ