খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

গুমের শিকার ব্যক্তিদের খোঁজে সিটিটিসির বন্দিশালায় সেনাবাহিনী

গেজেট ডেস্ক

ছোট্ট একটি দুর্গন্ধময় কক্ষ, ভেতরে তার চেয়ে ছোট নোংরা একটি টয়লেট। এখানে–সেখানে পড়ে আছে তোশক। সেখানে পৌঁছায় না দিনের আলো বা কোনো শব্দ। নেই কোনো জানালা। সব কক্ষেই পড়ে আছে কিছু ওষুধ। বলছি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) ভবনের বন্দিশালার (হাজতখানা) কথা।

সেই বন্দিশালায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষের মেঝেতে পড়ে আছে খাবারের উচ্ছিষ্ট, পানি। কোথাও পাতা আছে বিছানা, কোথাও আবার স্যানিটারি ন্যাপকিন, পাঞ্জাবি ঝোলানো, টি-শার্ট দড়িতে শুকাতে দেওয়া। কিন্তু সেখানে কোনো বন্দীকে পাওয়া যায়নি। সব কক্ষই ছিল খালি। সেখানে ছিল না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীও।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার আশায় বুধবার সকালে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে যান স্বজনেরা। বাসায় ফিরতে না ফিরতেই টেলিফোনে খবর আসে, সিটিটিসি থেকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ছাড়া হচ্ছে। এরপরই শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। সবাই গিয়ে জড়ো হন রাজধানীর মিন্টো রোডে সিটিটিসি ভবনের বাইরে।

কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ নিজের ভাইকে খুঁজতে বিকেলে সিটিটিসি ভবনে যান সহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম। সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে সানজিদা ইসলামের সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের পাহারায় আছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং সাদাপোশাকে থাকা পুলিশের দুজন কর্মচারী।

সিটিটিসি ভবন ও ছাদে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি। সানজিদা ইসলাম প্রতিটি তলায় গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বলতে থাকেন, ‘ভেতরে কেউ আছেন? ভেতরে কেউ আছেন?’ কিন্তু কোনো জবাব আসে না। সাততলার প্রতিটি কক্ষ ঘুরেও কাউকেই পাওয়া যায়নি।

কারও কারও ধারণা ছিল, বহু দিন ধরে নিখোঁজ থাকা তাঁদের স্বজনেরা সিটিটিসি ভবনে থাকতে পারেন। তাই ভবনে ঢুকে সব কক্ষে তল্লাশি চালান সেনাসদস্যরা। তবে সেখানে আটক থাকা কাউকেই পাননি তাঁরা। ভবনের ছাদে আটকে রাখা হতে পারে ভেবে দরজা ভেঙে ছাদে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও কাউকেই পাওয়া যায়নি। ছাদের ওপর কোনো কক্ষের সন্ধানও পাওয়া যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার ভোরে আট বছর পর নিজ নিজ বাসায় ফেরেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান) মিরপুর ডিওএইচএস থেকে এবং এর কয়েক দিন পর ২৩ আগস্ট আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল।

তাঁদের মতো করে কয়েক বছর ধরে খোঁজ না থাকা স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আশায় মঙ্গলবার সকালে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে যান অনেকে। মায়ের ডাক-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলামসহ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কচুক্ষেতের ওই ভবনের ভেতরে যান। সেখানে ডিজিএফআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। এ সময় গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন।

এর পরপরই খবর আসে, চট্টগ্রামে চোখ বাঁধা অবস্থায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমাকে পাওয়া গেছে। তিনি ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এই তিনজন ফেরার পর গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার আশায় বুক বেঁধেছে যে তাদের স্বজনেরাও হয়তো ফিরে আসবেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!