খুলনা, বাংলাদেশ | ২ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প

সিন নদীতে প্যারিস অলিম্পিকের জমকালো উদ্বোধন

স্পোর্টস ডেস্ক

এই প্রথম অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধন হলো কোনো স্টেডিয়ামের বাইরে, খোলা আকাশের নিচে। ঐতিহাসিক সিন নদীতে। মধ্যযুগীয় রূপকথা থেকে ‘ইমপ্রেশনিস্ট’দের বিখ্যাত সব ছবির সাক্ষী যে নদী। একদিকে উৎসবের নদী হিসেবে যা চিহ্নিত। পিয়ের অগুস্ত রেনোয়ার বিখ্যাত পেন্টিং ‘লাঞ্চ অব দ্য বোটিং পার্টি’-তে এই উৎসবের আমেজ অমরত্ব লাভ করেছে। জোয়ান অব আর্কের ছাই ছড়ানো হয়েছিল সিন নদীর পবিত্র পানিতে। আবার ভিক্তর যুগে লিয়োপোল্ডাইন নৌকা দুর্ঘটনায় ডুবে মারা যান। নেপোলিয়ন ‘প্যারিসের প্রধান সড়ক’ বলতেন সিন নদীকেই। গতকাল উদ্বোধীনের আগে সিন নদীর কাছে গিয়ে মনে হয়েছে গেমসের উদ্বোধন নয়, এই যেন এক বিশাল যুদ্ধের প্রস্তুতি। বিশাল সামরিক সজ্জা।

প্যারিসের একটা বড়সড় অঞ্চলকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে অনুষ্ঠিত হয়েছে অলিম্পিকের উদ্বোধন। বিশেষ করে নদীর চারপাশটা, যেখানে আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে সেটা আগের দিনই নিরাপত্তার বেষ্টুনিতে ঘিরে রাখা হয়। ‘কিউআর কোড’ না থাকলে এই সব অঞ্চলে ঢোকা যাবে না। অলিম্পিক কভার করতে আসা সাংবাদিকদের কার্ডের সঙ্গে এই মহামূল্যবান ‘কিউআর কোড’ রয়েছে। তার পরেও উদ্বোধন দেখতে এসে যে রকম নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে, তা বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। কারণ শুধু সাংবাদিকের কাছে কিউআর কোড থাকলেই তো হবে না, গাড়িচালকের কাছেও থাকতে হবে। আর এক-একটা রাস্তার জন্য এক-এক রকম কোড। কোনও একটা দিয়ে ঢুকে পড়লেন মানে চতুর্দিকে যাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে জায়গাটাকে দুর্গে পরিণত করে ফেলেছে আয়োজকরা। রোজই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে প্যারিসে। জঙ্গি সংগঠন হুমকি দিয়েছে। যদিও সংগঠকেরা জানিয়েছেন, ইন্টেজিলেন্স বিভাগের কাছে এ রকম কোনও খবর নেই। তবু কখন কী হয়ে যায়, কে বলতে পারে? গোটা দুনিয়া তাকিয়ে রয়েছে প্যারিসের দিকে। স্থানীয়রা বলছেন, ‘প্রশাসন চায় না ব্যর্থ হতে।’ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এর আগে সকাল ১০টা থেকে আসতে শুরু করে আমন্ত্রিত অতিথি ও সাংবাদিকরা। সিন নদীর দুই পাশেও ভিড় করতে থাকে দর্শনার্থীরা।

সবাই যে যুদ্ধের সাজগোজ দেখে খুশি, তা নয়। সিন নদীর তীরে অনেকে বসবাস করেন। তাদের আগে থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল, ‘কিউআর কোড’ সংগ্রহ করে নিতে। কেউ কেউ আগাম খবর খেয়াল করেননি। উদ্বোধনের লগ্নে নিজের বাড়ি থেকেও বেরোতে পারছেন না তারা। প্যারিসের এক সাংবাদিক বললেন, ‘স্থানীয়রা নিরাপত্তার এই বাড়াবাড়িতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তারা নাকি নামকরণ করেছেন ‘কিউআর কোড অলিম্পিক’।

বৃহস্পতিবার নদীর তীরে গিয়ে সবশেষ ছাত্র আন্দোলনের সময়কার কারফিউর কথা মনে হলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নানা দেশের অন্তত ১০০ জন রাষ্ট্রপ্রধান এসেছেন বলে শোনা গেছে। তিন লক্ষ পঁচিশ হাজার দর্শক এই অভিনব উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখবেন নদীর তীর ধরে বসে। সংগঠকেরা সংখ্যাটা আরও বেশি রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে কমাতে হয়েছে। প্রায় সাড়ে দশ হাজার প্রতিযোগী রয়েছেন এবারের গেমসে। নদীতে মার্চপাস্টে এক-একটা দল এসেছে নৌকায় করে। একশোর অধিক নৌকা ছিল উদ্বোধনীতে । বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন আরচার সাগর ইসলাম।

নদীতে আয়োজনের পাশাপাশি এই গেমসের উদ্বোধনে আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল ‘জিরো কার্বন’। গেমসে সাধারণত আতশবাজি ও আরো অনেক দ্রব্য পোড়ানো হয় যা পরিবেশ উপযোগী নয়। এবারের গেমসে পরিবেশকে অনেক প্রাধান্য দিয়েছেন আয়োজকরা। তাই পরিবেশের প্রতি হুমকি হতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ডই রাখা হয়নি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। শিল্প-সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে প্যারিসের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। সাংস্কৃতিক রাজধানী প্যারিস বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও আরেক কৃতিত্বের স্বাক্ষী হয়েছে। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সর্ববৃহৎ আসর অলিম্পিক সর্বোচ্চ তিন বার আয়োজনে লন্ডনের সমকক্ষ হলো প্যারিস। আধুনিক অলিম্পিকের যাত্রা ১৮৯৬ সালে। প্রথম অলিম্পিকের পরের আসরই হয়েছিল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ১৯০০ সালের পর অলিম্পিক আয়োজনে ফ্রান্সকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দুই যুগ। ১৯২৪ সালের পর তৃতীয় বারের মতো প্যারিসে অলিম্পিক আয়োজন, এবার অপেক্ষা ঘুচলো ১০০ বছরের।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!