খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বে‌রো‌বি’তে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিধিবহির্ভূতভাবে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কিছু কর্মকর্তাকে ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ।

শনিবার (২৯ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়া ১০৫তম সিন্ডিকেট সভায় অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমপর্যায়ের ৪র্থ গ্রেডে এসব কর্মকর্তার পদোন্নতি অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অনুসন্ধান সূত্রমতে, গত ৩১ মে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে বাছাই বোর্ড সম্পন্ন করেন উপাচার্য। পরে বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে গত ০১ জুন অনুষ্ঠিত হওয়া সিন্ডিকেটের ১০৩তম সভায় বাছাই বোর্ডের ওই সুপারিশে অনুমোদন দেননি উপস্থিত সদস্যবৃন্দ। এ বিষয়ে ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।

কিন্তু এরপরও এসব পদোন্নতি অনুমোদনের জন্য এবার মাত্র একদিনের ব্যবধানে দুইটি সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করা হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে এর একদিনের মধ্যেই শনিবার (২৯ জুন) আর একটি সিন্ডিকেট সভা আহ্বানের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হলেও তা আয়োজনের থেকে পিছপা হননি বেরোবি উপাচার্য।

এ দিকে, বেরোবির এক শিক্ষকনেতার স্ত্রী এবং জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের এক কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে পদোন্নতি দিতেই উপাচার্য এ অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক কর্মকর্তা।

এর আগে নজিরবিহীন গোপনীয়তায় কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (৪র্থ গ্রেড) ও সমপর্যায়ের পদে পদোন্নতি দিতে গত ৩১ মে বাছাই বোর্ডের আয়োজন করেছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ। বিষয়টি জানতে পেরে তার আগের দিন ৩০ মে বোর্ড বন্ধ করে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় ইউজিসি। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে আসায় নানা সমালোচনার ঝড় ওঠে। পাশাপাশি, ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ।

পরে সভায় সিন্ডিকেটের সদস্য রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন সভার শুরুতেই বিষয়টি সভায় উপস্থাপন না করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি সভায় বলেন, যেহেতু ইউজিসির এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে, সে কারণে ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে। অপর সদস্যগণের মধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন একই বক্তব্য উপস্থাপন করে ইউসিজির পরামর্শ ও বিধিবিধান মেনে সিদ্ধান্তের আহ্বান জানান। অন্য সদস্যগণও একমত পোষণ করায় তা সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

এ ছাড়াও, ৪র্থ গ্রেডের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের নিয়োগ বোর্ডে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট-১২ শাখার উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার মুখে তিনি ২৮ জুন তারিখের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (৪র্থ গ্রেড) ও ৯ম গ্রেডের হিসাবরক্ষণ পদে পদোন্নতির নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত হননি। পরে এ বিষয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে সম্মত হননি।

প্রসঙ্গত, এর আগেও কয়েকবার বাছাই বোর্ডের আয়োজন করে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞায় সফল হননি উপাচার্য। কিন্তু এবার অনিয়ম করে এই পদোন্নতি দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার চতুর্থ গ্রেডের পদসমূহে কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দিতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করে ইউজিসি। যাতে বলা হয়েছে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি এই চার দপ্তরে ৪র্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদ থাকবে। এই পদসমূহে ইউজিসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে, পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন দেওয়া যাবে না।

তবে ইউজিসির এই নির্দেশনা অমান্য করে বেরোবির উপাচার্য অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রথম বার কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাই বোর্ড এর আয়োজন করেছিলেন। বিষয়টি ইউজিসি’র নজরে আসলে ১১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে এবং দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করেছিল।

এরপর ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে পুনরায় একই পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বাছাই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হলে কমিশন আবারো ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে পুনরায় এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে বলে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বোর্ডের কার্যক্রম ভেস্তে যায়।
ইউজিসির নিষেজ্ঞার কারনে উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন দিতে না পেরে সরকারি ‘‘চাকরি [স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১২’’ এর ভুল ব্যাখাপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণকে ৪র্থ গ্রেড প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করলে কমিশন দুই দফা চিঠি দিয়ে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে এই প্রক্রিয়াটিও বাতিল হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. মজিব উদ্দীন আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সিন্ডিকেট সদস্য সৈয়দ আনোয়ারুল আজীম এ বিষয়ে বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আপনারা সিন্ডিকেট সভাপতির সঙ্গে কথা বলুন। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।

পরে বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন একটি জরুরি মিটিংয়ে আছি। এটা নিয়ে আপনি আগামীকাল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!