খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সেনা কর্মকর্তা লে. তানজিম হত্যা মামলার অন্যতম দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী

জালিয়াতি ও ভুয়া তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা : কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার

গেজেট ডেস্ক

জালিয়াতি ও ভুয়া তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যারা এতদিন সরকারি ভাতা সুবিধা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, তাদের কঠিন মাশুল গুনতে হবে এবার। সেই ভাতা সুদে-আসলে ফেরত নেবে সরকার। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ৮ হাজার ব্যক্তি এই জালিয়াতি করেছেন বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আগামী সপ্তাহ থেকে সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দেওয়া হবে। এসব ব্যক্তির কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মানি ভাতা ফেরত নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা রাখা হবে। এ বিষয়ে ‘সরকারি পাওনা আদায় আইন, ১৯১৩’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।

বুধবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক  বলেন, ১২ জুন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে সরকারি ভাতা সুদে-আসলে ফেরত নেওয়ার পরামর্শ, সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত এসেছে। আগামী রোববার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু হবে।

তিনি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করা ৮ হাজার ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’ আমরা বাতিল করেছি। এখন আমরা প্রত্যেকের জন্য একটি করে ফাইল খুলব। কে কত টাকা নিয়েছেন সেটি খুঁজে বের করব।

একই সঙ্গে কার সুপারিশে তারা (জালিয়াত) মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন- সেটিও অনুসন্ধান করা হবে বলে জানান মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দিচ্ছে সরকার। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ হাজার করে দুটি বোনাস, বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা এবং বাংলা নববর্ষের ২ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন তারা। খেতাবপ্রাপ্ত, শহিদ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ১১ হাজার ৯৯৮ জন। তারা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা বছরে সরকার থেকে ভাতা পান প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে মন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, যারা জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে সরকারি টাকা (যে ভাতা নিয়েছেন) আদায় করে ছাড়ব।

সরকার ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর দেশের কোথাও কোনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে থেকে গেছেন কিনা- তা নিশ্চিত করতে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। তখন বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়। ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর আবেদন গ্রহণ করা হয়। ওই সময় করা আবেদনগুলো ক, খ ও গ তালিকা নাম দিয়ে ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

এক্ষেত্রে বিধান করা হয়, উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আবেদনকারীকে শনাক্ত করবেন। যদি সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা এই মর্মে সাক্ষ্য দেন যে, আবেদনকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাহলে তার আবেদন ক-তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। জামুকার সুপারিশসহ মন্ত্রণালয় গেলে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

গেজেটভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কমপক্ষে ৩ জন ভারতীয়/লাল মুক্তিবার্তা তালিকাভুক্ত সহযোদ্ধা/সহপ্রশিক্ষণ গ্রহীতা সাক্ষী ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকলে তিনি কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তা ৩ জন ভারতীয়/লাল মুক্তিবার্তা তালিকাভুক্ত বীর সহমুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। ভারতীয়/লাল মুক্তিবার্তা তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

জানা গেছে, জামুকা দেশের ৮ বিভাগের জন্য আটজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধাকে প্রধান করে আটটি কমিটি গঠন করে ২০১৯ সাল থেকে তালিকাভুক্তির জন্য করা মুক্তিযোদ্ধাদের আপিল শুনানি করছেন। শুনানিতে তারা জানতে বা দেখতে চান, কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কত দিন ট্রেনিং করেছেন। কী কী অস্ত্রের ট্রেনিং নিয়েছেন। যুদ্ধে কী কী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন। সামরিক না বেসামরিক ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছেন। কমান্ডারের নাম কী। কোথায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হয়েছিল। সহযোদ্ধা হিসাবে কেউ আহত কিংবা নিহত হয়েছেন কিনা। জীবিতদের মধ্যে কেউ বেঁচে আছেন কিনা? জীবিত সহযোদ্ধাদের তারা চেনেন কিনা। এ ছাড়া জন্মতারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে সনদপত্র এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যেসব কাগজপত্র রয়েছে তা যাচাই করা হয়।

এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাইয়ে যদি ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষ্য দেন আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবার ৪ জন যদি সাক্ষ্য দেন আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা না, তা হলে সে আবেদনটি খ-তালিকাভুক্ত করা হয়। এই তালিকার আবেদনকারী জামুকায় আপিল করেন। আর কারও আবেদনের বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা যদি সাক্ষ্য দেন তিনি অ-মুক্তিযোদ্ধা, তাহলে তার আবেদন গ-তালিকাভুক্ত করা হয় এবং তিনি জামুকায় আপিল করেন। বাছাই কমিটিতে টাকা লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সরকার অনুমোদিত তালিকা যাচাই করে ভাতাপ্রাপ্ত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ২০২০ সালের অক্টোবরে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামের একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করা হয়েছে। নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় ‘লাল মুক্তিবার্তা’, ‘ভারতীয় তালিকা’ ও ‘গেজেট’। বর্তমানে এই সমন্বিত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ডিজিটাল সনদ প্রস্তুত করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশদের মাঝে বিতরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বা সনদ বাতিল হয়ে থাকলে তাদের ডিজিটাল সনদ ও স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ বন্ধ রাখতে হবে।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!