জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী নিজের বাবার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় সামাজিক পরিমণ্ডলে বাবাদের প্রভাব বা গুরুত্বের প্রতি জোর দিতে বাবা দিবস পালিত হয়। বিশ্বের প্রতিটি সন্তানের কাছে সহজাতভাবেই বাবা নির্ভরতার সর্বোৎকৃষ্ট স্থল বলে পরিগণিত। বাবারাই মায়েদের পাশাপাশি সন্তানদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠায় কাজ করেন নিরলসভাবে। ছেড়ে দেন নিজের অসংখ্য শখ-আহ্লাদ। তাই বছরের এ দিনটায় বিশ্ববাসী পিতাদের স্মরণ করে আসছেন শ্রদ্ধাভরে শত শত বছর ধরে। এমনকি এ দিবস উপলক্ষে পিতাদের উদ্দ্যেশে উপহারসামগ্রী এবং শুভেচ্ছা-বার্তা সংবলিত চিঠিও পাঠিয়ে থাকেন অনেকে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে বিশ্বের তরুণসমাজের মধ্যে যে কোনো দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশি। বাবা দিবসকে ঘিরেও তাই সন্তানদের অনেককেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবাকে নিয়ে ছবি, ভিডিও বা টেক্সট পোস্ট করতে দেখা অস্বাভাবিক কোনো কিছু নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড অবশ্যই ইতিবাচক। তবে বাবার প্রতি ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা প্রদর্শন যেন শুধু এই যান্ত্রিক দুনিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে না থাকে, সেটিও বিবেচনায় রাখা অত্যাবশ্যক।
প্রতিটি পরিবারে সাধারণত বাবারা মায়েদের পাশাপাশি সন্তানদের লালন-পালন ও ভরণ-পোষণে বৃহৎ ভূমিকা পালন করেন। সন্তানদের শৈশবে বাবারা ফুরসতে খেলার সঙ্গী হলেও, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা কারণেই বাবাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে সন্তানদের। এ সবের মধ্যে রয়েছে বাবাদের মানসিক চাপে ভোগা, সামাজিক অবস্থান নিয়ে ভাবনা, অর্থনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি, উত্তরাধিকার সম্পর্কিত সমস্যা এবং শারীরিক পরিস্থিতির অবনতির মতো বিষয়।
তবুও সময়ে-অসময়ে সন্তানদের ভরসার স্থল হিসেবেই বিরাজমান থাকেন বাবারা। সন্তানদের বিপদে বা সংকটকালে পাশে এসে দাঁড়ান। উত্তরণের পথ দেখান সুপরামর্শ বা অন্য কোনো উপায়ে। তাই যে ব্যক্তি সন্তানদের এত বড় আশ্রয়স্থল, সন্তানদের উচিত তাদের সব সময় পাশে থাকা।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকাল অনেক সন্তানই সেভাবে পিতার পাশে থাকেন না। দেন না পর্যাপ্ত সময়। এমনকি নিয়মিত কথা পর্যন্ত বলেন না কেউ কেউ। অথচ তাদের মধ্যকার অনেকেই বাবাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ব স্ব ব্যক্তিগত ওয়ালে লেখেন বৃহৎ বৃহৎ টেক্সট দিবস উদযাপনের সৌজন্যতার খাতিরে। যা এক রকমভাবে বলতে গেলে কপটতার শামিল।
তাই এ ধরনের কপটতার পথ বর্জন করে আমাদের দেশের সচেতন ও স্মার্ট তরুণসমাজ যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পাশাপাশি বাবাদের সঙ্গে নিয়মিত গঠনমূলক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সুসম্পর্ক অটুট রাখে, তবেই এ ধরনের দিবস পালন সার্থক হবে। অন্যথায়, পিতৃ-ভালোবাসা কারান্তরীত হয়ে রইবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লোকদেখানো পোস্টসমূহের অলীক কারাগারে!
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
খুলনা গেজেট/এএজে