খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

বিমানবন্দরে রাতভর অপেক্ষা, কান্না, হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন শ্রমিকরা

গেজেট ডেস্ক

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১-এর সামনে বসে ছিলেন হাবিবুর রহমান। তাঁর চোখে-মুখে হতাশা ও ক্লান্তির ছাপ। কাছে যেতেই বললেন, ‘আমি কৃষিকাজ করি। সচ্ছলতার আশায় মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্যোগ নিই। সেজন্য ঋণ করে ও জমি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করি। দালালের কথামতো স্বজনদের কাছ থেকে বিদায়ও নিয়ে এসেছি। সন্ধ্যায় ফ্লাইটে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু টিকিট আর হাতে পাইনি। বিদেশে যেতে না পারলে কীভাবে সংসার চালাব, ঋণ পরিশোধ করব?’

কথাগুলো শেষ করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাবিবুর। তাঁর মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) টাকা দেওয়া বহু মানুষ গতকাল শুক্রবার একই বিপদে পড়েন। বাংলাদেশ থেকে কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ সময় ছিল এদিন রাত। এই ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছিল।

সেই হিসেবে আজ শনিবার থেকে বিদেশি কর্মী ঢুকতে দেবে না মালয়েশিয়া সরকার। এ কারণে দেশটিতে প্রবেশের শেষ দিন গতকাল শাহজালাল বিমানবন্দরে ছিল মালয়েশিয়াগামী হাজার হাজার কর্মীর ভিড়। যারা বিমানের টিকিট পেয়েছেন, তারা ভোগান্তি সয়ে দেশ ছেড়েছেন। আর যারা রিক্রুটিং এজেন্সি এবং দালালকে লাখ লাখ টাকা দিয়েও টিকিট পাননি, তারা বিমানবন্দরে আহাজারি করেন। ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটের বিমান ভাড়া ২৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে লাখ টাকার বেশি হয় দিন দশেক আগেই। গতকাল প্রায় আট গুণ বেশি দামে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকায়ও টিকিট বিক্রি হয়।

সপ্তাহ দুয়েক ধরেই মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা ভিড় করেছেন বিমানবন্দরে। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ফ্লাইটের অপেক্ষায় হাজারো শ্রমিক মানবেতর সময় পার করছেন। শেষ দিনে যেন ঢল নামে মানুষের। একটি টিকিটের জন্য ছোটাছুটি করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিমানবন্দরের বহির্গমন ড্রাইভওয়েতে টিকিটের আশায় থাকা কয়েকজন জানান, দুপুর ১টায় বিমানের একটি ফ্লাইটে তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টায়ও ওই দালালের কোনো খবর নেই, টিকিটও দেননি। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে অপেক্ষারত মাদারীপুরের এনামুল হক জানান, কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়া যেতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় এখানে আসেন তিনি। টিকিট না থাকায় টার্মিনালে ঢুকতে পারছেন না। টেলিফোনে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ হলে শুধু বলছেন– অপেক্ষা করেন, টিকিটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

নওগাঁর আত্রাই থেকে আসা মো. শেরেকুল বলেন, ‘মালয়েশিয়া যাওয়ার ইচ্ছায় এসেছিলাম। এজেন্সি থেকে বলেছিল টিকিট পাব। সকাল থেকে এখানে বসে আছি। খাওয়া হয়নি। এজেন্সি থেকেও জানিয়েছে, টিকিট পাওয়া যায়নি। আমরা প্রতারণার শিকার।’

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে মালয়েশিয়াগামী বাড়তি একটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের কর্মকর্তারা জানান, বিজি ৩০৮২ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেবিচক থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। রাত ৮টায় বিমানবন্দর থেকে ২৭১ যাত্রী নিয়ে বিমানের বাড়তি এ ফ্লাইট মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়াগামী এ ফ্লাইটের ভাড়া প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

বিমানের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. আল মাসুদ খান জানান, মালয়েশিয়াপ্রবাসী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে একটি বিশেষ অতিরিক্ত ফ্লাইট গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে মালয়েশিয়াগামী তিনটি ফ্লাইট। রাত পর্যন্ত ছেড়ে যাবে আরও চারটি। এসব ফ্লাইটে যেতে পারবেন দেড় হাজার কর্মী।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!