খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সোনারগাঁওয়ে টিস্যু গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট
  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস

সংখ্যা কমছে, ঘূর্ণিঝড়ের বাড়ছে তীব্রতা

গেজেট ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা কমছে। এই সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টিও আগের চেয়ে কমেছে। ১৯৪৮ থেকে সর্বশেষ ২০২৩ সাল পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য সাগরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরেও তাপমাত্রা বাড়ছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়তো তীব্র হচ্ছে। কিন্তু এর সংখ্যা কমছে। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠেরও তাপমাত্রা সমানভাবে বৃদ্ধির ফলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সহায়ক পরিবেশে বিঘ্ন ঘটছে। নিম্নচাপ ও এর ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়লে উপকূল শুধু নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ ও অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে গবেষণা করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি ১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল অর্থাৎ মোট ৭৫ বছরের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং নিম্নচাপের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই অনুযায়ী, ৭৫ বছরে বঙ্গোপসাগরে ১৫১টি প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘূর্ণিঝড় হয়েছে নভেম্বর মাসে—৫১টি। এরপরই বেশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে মে মাসে—৩০টি। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে অক্টোবর মাসে—২৯টি।

বঙ্গোপসাগরে এই মিথস্ক্রিয়ার কাজটিই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দিন দিন। সাগরে পুবালি বায়ুর সঙ্গে পশ্চিমা বায়ুর মিলনের ফলেই সৃষ্টি হয় লঘুচাপ। বঙ্গোপসাগরে কোথাও এই মিলনটা কমে যাচ্ছে।

৭৫ বছরে বঙ্গোপসাগরে যত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপ

১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতি দেড় দশক ধরে হিসাব করে দেখা গেছে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সময়ে ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তি হয়েছে ২০টি। সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সময়ে। এ সময় ৫২টি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরে। এর পরই রয়েছে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯২ সাল। এই সময়ে উৎপত্তি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ছিল ৩০। ১৯৯৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সময়ে ২২টি, এরপর ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৪টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে।

বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি ছয়টি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছিল ১৯৬৮ সালে।

শুধু প্রবল ঘূর্ণিঝড় নয়, সাধারণ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতাও কমছে। মোট ৭৫ বছরে সবচেয়ে বেশি ২৬টি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছিল ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২—এই ১৫ বছরে। এরপর ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৭ সালে—২৫টি। এরপরের দেড় দশকে ২৩টি। পরের ৩০ বছরের প্রতি দেড় দশকে যথাক্রমে ১৪ ও ১৭টি।

বঙ্গোপসাগরে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯২—এই ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। এর সংখ্যা ছিল ২৩। এরপর আছে ২০০৮ থেকে ২০২২—নিম্নচাপ সৃষ্টির সংখ্যা ১৬। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ১৫।

সেই অনুযায়ী, ৭৫ বছরে বঙ্গোপসাগরে ১৫১টি প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘূর্ণিঝড় হয়েছে নভেম্বর মাসে—৫১টি। এরপরই বেশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে মে মাসে—৩০টি। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে অক্টোবর মাসে—২৯টি।

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি কেন কমছে

কোনো স্থানে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সেখানকার উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠতে থাকে। সাগরের কোনো স্থানে বাতাসের চাপ কমে গেলে সেখানে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। তখন আশপাশের জলীয় বাষ্পপূর্ণ ঠান্ডা বাতাস ওই জায়গায় চলে আসে। চারদিক থেকে আসা বাতাসের এক মিথস্ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়ের।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলছিলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে এই মিথস্ক্রিয়ার কাজটিই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দিন দিন। সাগরে পুবালি বায়ুর সঙ্গে পশ্চিমা বায়ুর মিলনের ফলেই সৃষ্টি হয় লঘুচাপ। বঙ্গোপসাগরে কোথাও এই মিলনটা কমে যাচ্ছে।’ আবার বায়ুমণ্ডলের বিন্যাসের তারতম্যের কারণেও এটা ঘটতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

ঘূর্ণিঝড় নির্ণয় করতে এখন নানা গাণিতিক মডেলের প্রয়োগ হয়। আগেকার পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার চেয়ে এসব এখন অনেক বিজ্ঞানসম্মত। তাই এসব মডেল ব্যবহারের ফলে সঠিক সংখ্যাটি নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন সমরেন্দ্র কর্মকার।

২০২১ সালে নাসা সেন্টার ফর ক্লাইমেট সিমুলেশনের (এনসিসিএস) করা ‘এক্সপ্লোরিং পাস্ট অ্যান্ড ফিউচার ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস ইন দ্য বে অব বেঙ্গল উইথ হাইএন্ড কম্পিউটিং’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘উষ্ণ জলবায়ুর কারণে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা প্রত্যাশিত সংখ্যার চেয়ে কমে যেতে পারে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ুর পরবর্তী সময়ে বেশি শক্তির ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ওপর।’

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেট্রোলজির ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘চেঞ্জিং স্ট্যাটাস অব ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস ওভার দ্য নর্থ ইন্ডিয়ান ওশেন’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১৯ সালে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ৫২ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু এ সময় বঙ্গোপসাগরে ঝড় কমেছে ৮ শতাংশ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!