উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রী ও এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। গতকাল দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে আবারও কড়া বার্তা দিয়েছেন। এ জন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সারাদেশ থেকে তথ্য নিয়ে তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার তালিকা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে দেশের ১৫০ উপজেলায় নির্বাচন হবে।
নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকে এখনও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি– সে বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক; তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে! সংসদ সদস্য পরিবারের সদস্য হলেই উপজেলা নির্বাচন করা যাবে না, বিষয়টি কতটুকু যুক্তিযুক্ত– এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি ঠিক নয়, আপনি সব যুক্তি উত্থাপন করতে পারেন; তবে আপনার যুক্তি জনগণ কী চোখে দেখছে? দেশের ভোটাররা কী চোখে দেখছে? আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্তে তৃণমূল পর্যন্ত মানুষ কিন্তু খুশি হয়েছে। দলের তৃণমূলের কর্মীরা তাদের মত-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার কারণ হচ্ছে, একটা দলে আমি এমপি, আমি মন্ত্রী, আবার আমার ভাই, ছেলে– এরাও পদ নিয়ে যাবে সব, তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা কী করবেন? তাদের পদে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই? সে সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’
কালীগঞ্জে এমপির ছেলে ও ভাই প্রার্থী
রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়াও জামায়াতের একজন ও বিএনপির পাঁচজন প্রার্থী হয়েছেন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে মনোনয়ন দাখিল করেছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ এমপির ছেলে ও আপন ভাই।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু ও শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা ডা. কুতুবউদ্দিন প্রার্থী হয়েছেন। কাহারোল উপজেলায় সুন্দরপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা পারভেজ আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আটজনের মধ্যে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও ময়দানদীঘি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাবীব আল আমীন ফেরদৌস প্রার্থী হয়েছেন। দেবীগঞ্জে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিমুল ইসলাম বুলবুল প্রার্থী হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক ও এমপি লোটাস কামালের ছোট ভাইও প্রার্থী
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে উপজেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক জাহেদুল্লাহ কোরাইশী প্রার্থী হয়েছেন। আর কুমিল্লার বরুড়ায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আপন শ্যালক মো. হামিদ লতিফ ভূঁইয়া কামাল। আওয়ামী লীগে তাঁর কোনো পদ নেই। পেশায় ব্যবসায়ী কামালের গ্রামের বাড়ি বরুড়ার আদ্রা ইউনিয়নের মনোহরপুরে। মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ার পরও প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কামাল বলেন, আমি কখনও মন্ত্রীর পরিচয়ে দাপট দেখাই না। তিনি (মন্ত্রী) আত্মীয় হিসেবে শ্রদ্ধার স্থানে আছেন, থাকবেন। আমি নিজের পরিচয়ে নির্বাচন করছি। অন্যদিকে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে সদর দক্ষিণ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের এমপি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দলের নেতাকর্মী সভা করে আমাকে নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। এ ছাড়া ১৫ বছরে কী করলাম, এ নির্বাচনে ভোটাররা রায় দেবে। কয়েক মাস ধরে নির্বাচন উপলক্ষে মাঠে কাজ করছি। এখন ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়া সম্ভব নয়।’
এদিকে খুলনায় তিন উপজেলায় এমপিদের ভাই ও আত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই বুলবুল আহমেদ টোকন চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি দৌলতপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।
নড়াইলের লোহাগড়ায় নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজার চাচা শ্বশুর ফয়জুল হক রোম প্রার্থী হয়েছেন। তিনি লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক নোয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ভাতিজা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।
ময়মনসিংহে এমপির ভাই প্রার্থী
ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কোতোয়ালি কৃষক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন নূর মোহাম্মদ প্রার্থী হয়েছেন। কৃষক দলের সাবেক নেতা হোসাইন নূর মোহাম্মদ এলাকায় বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত।
নেত্রকোনার পূর্বধলায় সাবেক তাঁতী দল নেতা আসাদুজ্জামান নয়ন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন এ আসনের এমপি আহমদ হোসেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জামালপুরের ইসলামপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামের সঙ্গে লড়বেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মসিউর রহমান।
বকশীগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন জামালপুর-১ আসনের এমপি নূর মোহাম্মদের ভাই নজরুল ইসলাম সাত্তার। এ উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি আবদুল রউফ তালুকদারও প্রার্থী হয়েছেন। এমপির ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রয়েছে অসন্তোষ। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজের ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করার বিষয়ে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।
শেরপুরে বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সদস্য মোকশেদুল হক ও উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. রাব্বেনুর চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এইচ