খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

উপজেলা নির্বাচন: মুখে কঠোর বিএনপি, প্রার্থী হচ্ছেন নেতারা

গেজেট ডেস্ক

প্রথম ধাপের ১৫২ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গতকাল সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। গতকাল পর্যন্ত এই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তার পরও উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী, রংপুরসহ সাংগঠনিকভাবে তাদের শক্তিশালী এলাকায় চেয়ারম্যানসহ অন্য দুই পদে প্রার্থী দিয়েছে। তাঁরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ১৫২ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪টি এবং সংরক্ষিত নারী পদে ৪৭১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। অর্থাৎ তিন পদে মোট এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে, নওগাঁর ধামইরহাট, গাজীপুর সদর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, কুমিল্লার নাঙলকোট, পঞ্চগড় সদর, ময়মনসিংহের ফুলপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় বিএনপির দুইজন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের সিংগাইরে একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, মেহেরপুর সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এর মধ্যে গাজীপুর সদরে বিএনপি নেতা এজাদুর রহমান চৌধুরী ওরফে মিলন (জেলা বিএনপির সহসভাপতি), মানিকগঞ্জের সিংগাইরে তোফাজ্জল হোসেন (উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি) ও মোছা. আঁখি (সিংগাইর মহিলা বিএনপির সহসভাপতি), হরিরামপুরে বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান তুষার (উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক), সুনামগঞ্জের দিরাইতে গোলাপ মিয়া (উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক), শাল্লায় গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার (উপজেলা বিএনপির সভাপতি), কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ইমান আলী (বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি), ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বিএনপি নেতা ইসমাঈল হোসেন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে বিএনপি নেতা শাহ মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরী (উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান), পঞ্চগড় সদরে বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু দাউদ প্রধান, আটোয়ারীতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান এবং তেঁতুলিয়ায় বিএনপির সমর্থক মুক্তারুল হক মুকু, ফরিদপুরের সালথায় মো. আসাদুজ্জামান আসাদ (উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক) এবং রাজশাহীর গোদাগাড়িতে জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনী, সিলেটের বিশ্বনাথে সোহেল চৌধুরী (বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা), একই উপজেলায় গৌছ খান (পৌর বিএনপির সদস্য), সেবুল মিয়া ও শফিক মিয়া (যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা) প্রার্থী হয়েছেন।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, বেশির ভাগ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। দলগতভাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিলেও দলের নেতারা প্রার্থী বেশি হয়েছেন।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী তা এখনো পরিষ্কার নয়। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বর্জন প্রশ্নে বিএনপি গতকাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কৌশল কী তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ সব মহলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

বিএনপি দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে যে অংশগ্রহণ করছে না তা নিশ্চিত করেছেন দলের একাধিক নেতা। কিন্তু দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে সে ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে এখনো সবাইকে অস্পষ্টতায় রেখেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। গত কয়েক দিনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামত নিয়েছেন।

এবার চার ধাপে মোট ৪৮১ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের বিষয়ে গত ২৫ মার্চ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মাঝে দুই সপ্তাহের বিরতির পর গতকাল রাত ১০টায় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠক বসে। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। বিএনপি সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলেও তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের মাঠে থাকছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী  বলেন, ‘নতুন সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্ত বলবৎ আছে। এখনো পর্যন্ত বলা যায়, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।’

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী বিএনপি নেতাদের মধ্যে দল থেকে বহিষ্কারের ভয় আছে। এর আগেও বিএনপি দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় অনেক নেতাকে বহিষ্কার করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে বিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা দলের কৌশলের অংশ। এর মাধ্যমে বিএনপি দেখতে চাইছে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কতসংখ্যক নেতা প্রথম ধাপের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল। এই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেন, উপজেলার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দলগতভাবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে দলের কৌশল কী হবে তা স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হবে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!