তিন কার্গো এলএনজি আমদানি, টিসিবির জন্য ভোজ্যতেল কেনাসহ ১০ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ১১২ কোটি টাকা।
বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে কমিটির সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ওই বৈঠক।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।
স্পট মার্কেট থেকে পৃথক তিনটি প্রস্তাবে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিটের দাম ৯.৬৮ মার্কিন ডলার এবং সুইজারল্যান্ডভিত্তিক টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার প্রতি ইউনিটের দাম ৯.৬৯ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে। দর প্রস্তাবে ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ গ্যাস। এতে মোট ব্যয় হবে ৪১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৭৬০ টাকা। এ ছাড়া এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড। প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৯.৮৯ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিটের দাম ১০.৩৬ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হয়। এ অবস্থায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৪২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
তৃতীয় পর্যায়ে এক কার্গো এলএনজির সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড সরবরাহ করবে। এতে প্রতি ইউনিটের দাম ৯.৪৯ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ৪১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া বৈঠকে রেলওয়ের জন্য ২০০ বগি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য বগি সংগ্রহ করা হবে।
বৈঠকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ৩৬৬.৩৭ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল, এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ও ৫০ লাখ লিটার রাইস ব্রান তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৪৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে সয়াবিন তেল কেনায় ব্যয় হবে ১৬৮ কোটি ২৭ লাখ। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫২.৯৮ টাকা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিটি এডিবল ওয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে এ তেল কেনা হবে।
এ ছাড়া ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কিনতে মোট ব্যয় হবে ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রতি কেজি ডালের দাম পড়বে ১০২.৭৫ টাকা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন ও নাবিল নাবা ফুড লিমিটেড থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনা হবে।
একই পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার রাইস ব্রাণ তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৭৬ কোটি টাকা। প্রতি কেজি রাইস ব্রাণ তেলের দাম পড়বে ১৫২ টাকা। মজুমদার ব্রান অয়েল মিলস লিমিটেড এবং মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে এ তেল কেনা হবে।
বৈঠকে ভারত থেকে ২৩৯ কোটি টাকায় ট্রেইলিং সাকশন হোপার ড্রেজার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ভারতের কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের কাছ থেকে কেনা হবে।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে জাপানের নিপ্পন কোই কোই লিমিটেড এবং কোই রিচার্স অ্যান্ড কনসাল্টিং ইনকরপোরেশন সঙ্গে ১৭২ কোটি ১৭ লাখ ৯৭৯ টাকায় নিয়োগের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমানকালে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় কাজ বৃদ্ধি পায়। ফলে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৭ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৬ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব আসে। এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
অপরদিকে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৩ কোটি ৭২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে করা হয়।
এ ছাড়া ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০১ এর পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব নিয়ে আসে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
খুলনা গেজেট/এএজে