অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। মিরপুর শের-ই-বাংলায় প্রথম ওয়ানডেতে ১১৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা।
লক্ষ্য খুব বেশি বড় ছিল না। অন্তত বিশ্ব ক্রিকেটের বিবেচনায়। কিন্তু মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েরা এর আগে কেবল একবারই দুইশ রানের কোটা পার করতে পেরেছে। অস্ট্রেলিয়া নারী দলের বিপক্ষে ২১৪ রানের লক্ষ্যটা তাই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই ছিল।
আর সেই লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ৩৬ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে টাইগ্রেসদের ইনিংস থেমেছে মাত্র ৯৫ রানে। ফলাফল ১১৮ রানের হার। স্বাগতিকদের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। এ ছাড়া দুই অঙ্ক পেরোতে পেরেছেন কেবল আর দুই জন—সোবহানা মোস্তারি (১৭) ও মুর্শিদা খাতুন (১০)।
পুরুষদের মতো নারী ক্রিকেটেও প্রবল শক্তিধর অস্ট্রেলিয়া। এক দুই কিংবা তিন নয়, ওয়ানডেতে রেকর্ড ৭ আর টি-টোয়েন্টিতে ছয়বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অজি মেয়েরা। সেই চ্যাম্পিয়নরা প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছে বাংলাদেশে। যে কারণে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই সিরিজ। ভালো কিছুর প্রত্যাশা ছিল স্বাগতিক দলেরও। যদিও তাদের শুরুটা হয়েছে বড় হারে।
২১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফারজানা পিংকি ক্যাচ দিয়েছেন অ্যালিসা হিলিকে। মেগান শুটের ইনসুইং ঠেকাতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। দুইয়ে নামা মুর্শিদা এরপর সোবহানাকে নিয়ে এগোতে চেয়েছিলেন। দলীয় ২১ রানের মাথায় আবার ছন্দপতন। অ্যালিশা গার্ডনারের বলে স্লিপে বেথ মুনিকে সহজ ক্যাচ দেন মুর্শিদা।
এর পরের জুটি ঠিক ৪৯ রানের। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি আর সোবহানা খেলছিলেন দারুণ। প্রায় প্রতি ওভারেই ছিল বাউন্ডারি। সঙ্গে সিঙ্গেলসে রান এসেছে নিয়মিত। অন্তত রানতাড়া করতে নেমে খুব বেশি বিপাকে পড়ার মতো অবস্থায় ছিল না টাইগ্রেসরা। দলীয় ৭০ রানে ভাঙ্গে এই জুটি। অ্যালানা কিংয়ের দারুণ এক সুইং বলে পরাস্ত সোবহানা।
ফাহিমা এসে এরপর টিকতে পারেননি। অহেতুক রান নেওয়ার চেষ্টায় হয়েছেন রানআউট। একই অবস্থা রিতুমনির বেলায়ও। কুইক সিংগেল নিতে গিয়ে উইকেটই খুইয়ে এসেছেন তিনি। এক ইনিংসে তৃতীয় রান আউটের শিকার হন জ্যোতি। ভালো ছন্দে ছিলেন, দলের আশা ভরসাও নির্ভর করছিল তার ওপরই। আগের দুই ব্যাটারের মতো রানআউটের ফাঁদে পড়েন টাইগ্রেস কাপ্তানও। তিন ব্যাটারের পরপর ‘দৃষ্টিকটু’ রানআউটে ম্যাচ তখনই শেষ হয়ে যায়। পরের ব্যাটাররা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট শিকার করেছেন অ্যাশলি গার্ডনার। এ ছাড়া দুটি উইকেট পেয়েছেন কিম গ্রাথ। এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মিরপুরের স্পিনিং আর স্লো উইকেটে শুরুটা ভালো ছিল না অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদেরও। অ্যালিসা হিলি, ফোবে লিচফিল্ড, বেথ মুনি কিংবা তাহলিয়া ম্যাকগ্রাদের কেউই নিজেদের চেনাতে পারেননি।
অবশ্য পরে ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় অজি মেয়েরা। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের অপরাজিত ৭৬ বলে ৫৮ আর অ্যালানা কিংয়ের চল্লিশ পেরোনো ইনিংসের সঙ্গে অ্যাশলি গার্ডনারের ৩২ রানে ভর করে কন্ডিশন অনুযায়ী ২১৩ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় সফরকারীরা।
হারের ম্যাচেও বাংলাদেশের প্রাপ্তি হতে পারে নাহিদা আক্তারের বোলিং। দুই উইকেট শিকার করে নিজের নাম রেকর্ডবুকে তুলেছেন টাইগ্রেস স্পিনার। নভেম্বর মাসেই আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটারের খেতাব পাওয়া নাহিদা এই ম্যাচে নেমেছিলেন ৫১ উইকেট নিয়ে। তাহলিয়া ম্যাকগ্রা আর অ্যাশলি গার্ডনারের উইকেট পেয়েছেন আজ। তাতেই গড়েছেন রেকর্ড। নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সিতে ওয়ানডে ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন নাহিদার। পেছনে ফেলেছেন সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুনকে।