রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভেঙে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৯ এর ২৮(৩) ধারা অনুযায়ী যেকোনো বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে বিভাগীয় অধ্যাপকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে তিন বছরের জন্য বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ করা হয়। কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সহযোগী অধ্যাপক না থাকলে বিভাগের প্রবীণতম শিক্ষক বিভাগীয় প্রধান হতে পারবেন।
তবে আইনের ওই ধারা অনুযায়ী সহযোগী অধ্যাপকের নিম্নের কোনো শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধান পদে নিযুক্ত না করার কথা থাকলেও সম্প্রতি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে তা লঙ্ঘন করে একজন সহকারী অধ্যাপককে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অবৈধ এ আদেশ বাতিল চেয়ে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন আইনানুযায়ী বিভাগীয় প্রধান পদের দাবিদার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তাবিউর রহমান প্রধান।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেরোবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন মো. তাবিউর রহমান প্রধান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আপগ্রেডেশন/প্রমোশন নীতিমালা অনুযায়ী যথানিয়মে সহকারী অধ্যাপক এবং আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে ২০২১ সালের ৭ মার্চ থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এ বিভাগে শিক্ষকগণের মধ্যে ৩জন সহযোগী অধ্যাপক, ৪জন সহকারী অধ্যাপক এবং ২জন প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
সহযোগী অধ্যাপকগণের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাবিউর রহমান প্রধানের অবস্থান দ্বিতীয়। বিভাগে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম চলতি বছরের ১০ মার্চ বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তাঁর দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করেন।
বর্তমানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর ধারা-২৮(৩) অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তাবিউর রহমান প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও তা না করে সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহারকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করে কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে সহযোগী অধ্যাপক মো. তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান পদে নিয়োগের জন্য সহযোগী অধ্যাপক থাকা স্বত্ত্বেও বেরোবির আইন লঙ্ঘন করে সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহারকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে ‘আইনগত জটিলতা’ থাকার কথা বলা হলেও বিভাগে কর্মরত শিক্ষকবৃন্দের জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে কোন আইনগত জটিলতা নেই। শিক্ষকগণের জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী যথানিয়মে বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান থাকলেও বিভাগীয় প্রধান নিয়ে কেন জ্যেষ্ঠতার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেটা বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকগণের পক্ষ থেকে উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ১০ মার্চ দেওয়া নিয়োগপত্রে বলা হয়েছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর-এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে কর্মরত শিক্ষকগণের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে আইনগত জটিলতা থাকায় নিয়ামুন নাহারকে গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করা হলো।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে ইতোমধ্যেই লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়ামুন নাহারের নাম দেখানো হচ্ছে।
আইনগত জটিলতার বিষয়ে কথা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, সিনিয়রিটি-জুনিয়রিটি নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এ জটিলতা কেটে যাবে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ এএজে