বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ কেমন ছিল? ভোটের আগে-পরের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলতে পারে? ভারত, মিয়ানমার সহ প্রতিবেশীদের বিষয়ে সাধারণের কী ভাবনা? সরকার, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ-ই বা কী ভাবছে? বিরোধীদের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত ভোটে নতুন সরকার গঠন এবং বিরোধী দলগুলোর হাজার হাজার বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়া পরবর্তী রাজনীতির হাওয়া কোনদিকে বইছে? তা সশরীরে পর্যবেক্ষণ করে গেলেন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেই সঙ্গে নির্বাচন তথা বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমতের কথা স্পষ্ট করলো মার্কিন প্রতিনিধিদল।
শনি থেকে সোমবার ৩ দিন- ঢাকায় সিরিজ বৈঠক করে গেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব এবং দাতব্য সংস্থার ৩ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত ওয়াশিংটনের ইভাল্যুয়েশন টিম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও দিল্লির মধ্যকার ভিন্নমতের বিষয়টি নাগরিক সমাজ এবং বিএনপির সঙ্গে প্রতিনিধিদলের (উভয়) বৈঠকে আলোচনা হয়। বিএনপির নেতৃত্বের দুর্বলতা, আলোচিত ২৮ অক্টোবর পরবর্তী বিএনপির হরতাল কর্মসূচি নিয়ে বিভ্রান্তি, ভোট বর্জনের কর্মসূচি কেবলমাত্র লিফলেট বিতরণে সীমাবদ্ধ রাখাসহ নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং কর্মসূচি নিয়ে নেতাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকার বিষয়টি ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে।
মার্কিন আন্তঃসংস্থার ওই টিমের নেতৃত্ব দেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লাউবাচার। সঙ্গে ছিলেন দাতব্য সংস্থা ইউএসএআইডি’র এশিয়া বিষয়ক সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। ঢাকায় তাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকগুলোর খানিকটা প্রকাশ পেয়েছে, তবে আলোচনার বেশির ভাগই এখনো অপ্রকাশিত। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা মার্কিন প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন ফিরে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত রিপোর্ট করবে। যার রিফ্লেকশন থাকবে বাংলাদেশ তথা এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপে।
সফর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে সরব যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল।
তাদের প্রত্যাশা ছিল ২০১৪ এবং ’১৮-র প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের তুলনায় এবার একটি প্রশ্নহীন নির্বাচন হবে। কিন্তু না, বিতর্কমুক্ত নির্বাচন না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র যে হতাশ, তা ওয়াশিংটনের মুখপাত্র স্পষ্ট করেছেন। অবশ্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চিঠি লিখে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং আগামীতে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা বলেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চপদস্থ ৩ কর্মকর্তার সমন্বিত এই সফর নির্বাচন পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ধারাবাহিকতা। মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকা ছাড়ার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেই আলোচনায় রসদ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাক্যবাণে আক্রমণ করে। বিএনপি মহাসচিব লাঠিতে ভর করে মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে নালিশ করেছেন- মর্মে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কিন্তু রাজনীতি সচেতনরা দেখছেন ভিন্ন কিছু।
তাদের মতে, সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগে সদ্য কারামুক্ত বিরোধী নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক নতুন কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে। তাছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা চেয়েছে, এটাও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিনিধিদলের বৈঠকগুলোর বিষয়ে ঢাকাস্থ দূতাবাস আলাদা আলাদা সংক্ষিপ্ত এবং সচিত্র বার্তা প্রচার করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক এবং পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন-সব মিলিয়ে এ সংক্রান্ত ৬টি ছবি প্রচার করেছে মার্কিন দূতাবাস। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা প্রচার করা হয়েছে। তাতে সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতার বিষয়টি ফোকাস করা হয়েছে।
বার্তাটি ছিল এমন “যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে। আমরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি যে, আমাদের দুই দেশ কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম এবং বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।”
সফরের দ্বিতীয় দিনে রোববার ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটায় মার্কিন প্রতিনিধিদল। তাদের সমাপনী বৈঠক তথা নৈশভোজ ছিল প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমপি’র সঙ্গে। সেই বৈঠকের পর উপদেষ্টা গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। গতকাল মার্কিন দূতাবাসের তরফে জোড়া ছবি দিয়ে একটি বার্তা প্রচার করা হয়েছে। তাতে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা সেটি ব্যক্ত করা হয়।
বাংলায় প্রচারিত দূতাবাসের বার্তাটি এমন “৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আরও অনেক কিছু মোকাবিলায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রদান করেছে! সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো কীভাবে সহযোগিতা করছে তা জানতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আনন্দিত। আমরা আগামী পঞ্চাশ বছর এবং তার পরেও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।” যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী এবং দেশটির একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।
দূতাবাসের এ সংক্রান্ত আরেকটি বার্তায় বলা হয়, “কীভাবে আমরা ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করে, বাংলাদেশে বিনিয়োগকে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি? ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসা আমাদের নেতৃবৃন্দ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্থানীয় অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে এমন একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক বিষয়ে দূতাবাস একটি বার্তা প্রচার করে। তাতে প্রশ্ন রেখে বলা হয় “আপনি কি জানেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ? জলাভূমি রক্ষা ও বন সংরক্ষণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে শুরু করে, বায়ুদূষণ মোকাবিলায় তরুণ জলবায়ুকর্মীদের সহায়তা করা পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে এই যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠক বিষয়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা প্রচার করেছে দূতাবাস। এতে ‘সুস্থ গণতন্ত্র’ এবং ‘ইতিবাচক পরিবর্তন’ আনতে নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কামনা করা হয়েছে। বার্তায় বলা হয়, “সুস্থ গণতন্ত্র এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনায় দেশটির সুশীল সমাজের সাহসী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে আমাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে, এবং বাংলাদেশ সরকারকেও তা-ই করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
শ্রমখাতের নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠক নিয়েও স্বতন্ত্র বার্তা প্রচার করেছে মার্কিন দূতাবাস। তাতে বলা হয় “বাংলাদেশের মানুষ যেনো সংগঠিত হতে এবং সম্মিলিতভাবে তাদের দরকষাকষির অধিকারের উন্নয়ন করতে পারে, তার সমর্থন জানায় যুক্তরাষ্ট্র। শ্রম অধিকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমরা আনন্দিত, কারণ তারা সাহসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা, সম্মিলিত দরকষাকষির অধিকার এবং মানসম্মত মজুরির জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন-এর গ্লোবাল লেবার পলিসি বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকার উন্নয়নে নিয়োজিত।”
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সফরকালে প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লাউবাচারের কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তবে তিনি এ-ও বলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সরকার প্রধানের চিঠির মূল কপিটি শিগগিরই হোয়াইট হাউসে পৌঁছে দিবেন। চলতি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন। তিনি একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘সমস্যা সমাধানে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার দীর্ঘ ও সফল ইতিহাস রয়েছে এবং আমাদের শক্তিশালী মানুষে-মানুষে বন্ধনই এই সম্পর্কের ভিত্তি।’
নাগরিক সমাজের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠকে নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি বিশেষত: নাগরিক অধিকার চর্চার সুযোগ কেমন? তা জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র কতোটা সঙ্কুচিত হয়েছে? তা-ও জানতে চান ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিরা। এ সময় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার প্রসঙ্গও আলোচনায় আসে। যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) বাসায় রোববার সকালে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন ৩ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য- ইউএসএআইডি’র সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। বৈঠকে নাগরিকের অধিকার চর্চার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। প্রায় দু’ঘণ্টা স্থায়ী ওই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন, অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক ও সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান অংশ নেন।
সূত্র মতে, নানা বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে প্রশ্ন ছিল মার্কিন টিমের। উত্থাপিত বিষয়গুলোতে নাগরিক সমাজের ভাবনার বিষয়ে জানা-বোঝার চেষ্টা করেন তারা। সমপ্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নাগরিক সমাজ কীভাবে দেখছে, সেটাও জানতে চায় মার্কিন টিম।
এ ছাড়া বিরোধী দল নির্বাচনের পর কোন অবস্থায় রয়েছে কিংবা বিরোধী দলের সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনা আসে। এই মুহূর্তে নাগরিক সমাজ কতোটা স্বাধীনভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে? কাজ করতে গিয়ে তারা কী ধরনের বাধার মুখে পড়ছেন? বিষয়গুলো খোলাখুলিভাবে জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল।
একটি সূত্র জানায়, নাগরিক সমাজের কর্মকাণ্ড বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ ওঠে। বিশেষ করে শ্রম আইনে মামলাসহ তাকে ঘিরে যেসব তৎপরতা, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা জানতে চান।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় দেশটি। রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি’র বাসভবনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ সহকারী ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লাউবাখেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নৈশভোজ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-ইউএসএআইডি’র সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার।
সালমান এফ রহমান, বলেন, কিছুদিন আগে জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করতে চান এবং নতুন অধ্যায় শুরু করতে চান। বাংলাদেশ সফররত প্রতিনিধিদলও একই কথা বলেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জানান, ‘নির্বাচন এখন পেছনের ঘটনা। সেটা নিয়ে তারা কোনো কথা বলেনি; আমরাও বলিনি। বরং সামনের দিনগুলোতে কীভাবে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করা যায় সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমেরিকাও চায় রোহিঙ্গারা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাক। সেই সঙ্গে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে মার্কিন প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গাকে তারা আরও সহযোগিতা করতে চায়।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদল মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান, এমপি বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছে; সেই সঙ্গে আমাদেরকেও নজর রাখতে বলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের তাদের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স প্রোগ্রামে (ডিএসপি) যুক্ত করতে চায়। এর জন্য তারা কয়েকটা শর্তের কথা বলেছে। এগুলো শিগগিরই জানাবে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে চলমান প্রকল্প অব্যাহত থাকবে।
সূত্র : মানবজমিন।