খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : টাকাও গেল সন্তানও হারালেন মাদারীপুরের ৫ মা

গেজেট ডেস্ক

অবৈধভাবে সমুদ্র দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে বাংলাদেশের নয়জন যুবক মারা গেছেন। এর মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে লিবিয়ার দূতাবাসের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়।

এই মৃত্যুর খবরে আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো। নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে পরিবারগুলো। পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশী, আত্মীয়–স্বজন, এলাকাবাসী। এক সঙ্গে একই উপজেলায় ৫ জনের অকাল মৃত্যুর খবরে উপজেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

নিহতরা হলেন— মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), একই ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), কদমবাড়ির ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কবিরাজপুর ইউনিয়নের কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার হোসেন (২২)।

বাকি তিনজন হলেন, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউয়িনের বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ (২১), দিকনগর ইউনিয়নের ফতেয়পট্টি এলাকার মো. রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস আপন (২২)।

স্থানীয় ও পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ও গোপালগঞ্জের বেশ কয়েকজন যুবক ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তাঁরা লিবিয়াতে অবস্থান করেন। এরপর দালালদের মাধ্যমে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। ৩২ জন ধারণক্ষমতার নৌকায় ৫২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করে নৌকাটি। পথে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার জলসীমায় নৌকার ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। পরে ইঞ্জিনে আগুন ধরে সাগরেই ডুবে যায় নৌকাটি।

এই ঘটনায় মাদারীপুর রাজৈরের সজীব কাজী, মামুন শেখ, সজল বৈরাগী, নয়ন বিশ্বাস, কাওসার ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রিফাদ, মো. রাসেল ও গয়লাকান্দি গ্রামের ইসরুল কায়েস আপন মারা যান। তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে।

নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গজারিয়া গ্রামে রহিম শেখ ও রাঘদি ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী দীর্ঘদিন ধরে যুবকদের নানা প্রলোভন দেখান। দালালেরা প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০–১৫ লাখ করে টাকা নেন। দীর্ঘদিন ধরে এই দালালেরা গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন যুবকদের অবৈধভাবে ইতালি নেওয়ার কাজ করছেন। ভাগ্য ভালো হলে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি যেতে পারেন অনেকে। অনেকের সলিলসমাধি ঘটে পথেই।

রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের নিহত সজীব কাজীর চাচাতো ভাই মেহেদী কাজী বলেন, ‘এভাবে আমার ভাই মারা যাবে, এটা কখনই ভাবতে পারিনি। দালালদের কঠোর বিচার হওয়া উচিত। দালালদের কাজের সঙ্গে কথার কোনো মিল নেই। তারা লোভে ফেলে ইতালি নেওয়ার কথা বলে, পরে জীবনের হুমকি নিয়ে সমুদ্র পার করায়। এটি জঘন্যতম কাজ। এগুলো বন্ধের দাবি জানাই।’

রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের নিহত সজীব কাজীর বাবা মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ‘ধারদেনা করে এই টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। এখন পাওনাদারও টাকার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন হবে যাবে। মাসে কিস্তির টাকা কীভাবে দিব জানি না। ভেবেছিলাম ছেলে ইতালি যেতে পারলে আর দুঃখ থাকবে না। এখন তো আমার সব শেষ হয়ে গেল!’

রাজৈরের খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজিব শেখ জানান, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী। মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নেন। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লিবিয়া থেকে ইতালির দিকে পাঠালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী জমি, গরু বিক্রি করে, ঋণ করে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে ইতালি যাওয়ার জন্য দালালের হাতে তুলে দেন। সুনীল বিলাপ করে বলেন, ‘আমরা একেবারে পথে বসে গেছি। এখন আমরা কী করব! আমার ছেলে গেল, সাথে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল! এই ঘটনায় আমরা দালাল মোশারফ কাজীর কঠিন বিচার চাই।’




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!