রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তিন দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের দুই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাবা-মাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ চিকিৎসকরা অনুসন্ধান করছেন বলে জানা গেছে।
মৃত দুই শিশুর নাম মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাশিয়া (৪)। তাদের বাবার নাম মনজুর রহমান (৩৫)। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকেন।
জানা যায়, হঠাৎ জ্বর আর বমির কারণে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারিশা মারা যায়। মারিশার মৃত্যুর তৃতীয় দিনে একই লক্ষণ নিয়ে মাশিয়াও মারা যায়। মৃত্যুর আগে ও পরে দুই শিশুরই শরীরে ছোপ ছোপ কালো দাগ দেখা দিয়েছিল। এটি কোনো ভাইরাসের সংক্রমণে হতে পারে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শনিবার বিকেল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। আর বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে দুই শিশুর বাবা–মাকে হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকেরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। আর বিকেলে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও একই স্থানে দাফন করা হয়েছে।
শিশুদের মা পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া (গৃহকর্মী) কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। পরদিন বুধবার সকাল ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশা জ্বরে আক্রান্ত হয়। বারবার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে নেন। পথে কাটাখালী এলাকায় মারা যায় মারিশা।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও একই লক্ষণ দেখা দেয়। ফলে দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কালো দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে ২ জনই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা–মা জানিয়েছেন, তারা খেঁজুরের রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনো ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলেই কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা–মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
খুলনা গেজেট/এইচ