আইসিসি’র টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের। করোনা পরবর্তী সময়ে এখনও কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি বাংলাদেশে। তবে জানুয়ারিতে এই সিরিজের ব্যাপারে আশাবাদি বিসিবি। এরই মধ্যে সিরিজ আয়োজনের প্রাক প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে তারা। এরই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গাইড লাইন পাওয়ার জন্য প্রস্তাব তৈরী করা হয়েছে।
ইংল্যান্ডে করোনা প্রকোপের সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেশটিতে সফর করা প্রথম দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সবার আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) আয়োজন করেছে তারাই। নভেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফর ঠিক থাকলে দ্বিতীয় আরেকটি দেশে সফর করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে তারা। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশে আসার কথা জানুয়ারিতে। সেটি হলে ‘নিউ নরমাল’ সময়ে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ইতিহাস গড়া হবে ক্যারিবীয়দের। দ্বিপক্ষীয় এ সিরিজটি নির্ধারিত সময়ে হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান। তিনি জানান, উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সিরিজের আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন তারা। বায়োসিকিউর বাবল পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে দু-এক দিনের মধ্যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হতে পারে। বিসিবির প্রস্তাব, ঢাকায় নেমে এক সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে থাকাবস্থায়ই অনুশীলন করতে পারবে সফরকারীরা।
বাংলাদেশ-উন্ডিজের মধ্যে তিনটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি মিলে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ হবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। ইংল্যান্ডের মতো বিসিবিও দুটি ভেন্যুতে সীমিত রাখবে খেলা। ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সঙ্গে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী বা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হবে দ্বিতীয় ভেন্যু। হোটেলের বায়ো-বাবল নিরাপত্তা ও মাঠে যাতায়াতের সুবিধা গুরুত্ব পাবে ভেন্যু নির্বাচনে।
এ মুহূর্তে ভেন্যুর চেয়েও গুরুত্ব পাচ্ছে সফরকারীদের জন্য বায়োসিকিউর বাবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানান, ইংল্যান্ড ও আইপিএলের মডেল কাজে লাগিয়ে বায়ো-বাবল গাইডলাইন তৈরির প্রক্রিয়ায় শেষের পথে। এক-দু’দিনের মধ্যে ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিজামউদ্দিনের কাছে গাইডলাইন হস্তান্তর করতে পারে বোর্ডের মেডিকেল বিভাগ। দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘ইংল্যান্ড এবং আইপিএলের বায়ো-বাবল মডেল ধরে বিসিবি একটি গাইডলাইন তৈরি করছে, যেখানে কোয়ারেন্টাইনে উইন্ডিজ দলের জন্য অনুশীলন সুবিধা রাখা হচ্ছে। এখন যারাই খেলায় ফিরছে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা একই রকম হচ্ছে। এ ছাড়াও যে জিনিসগুলো থাকা অত্যাবশ্যক সেগুলো তো থাকবেই। বিসিবির গাইডলাইন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বোর্ড।’ বিসিবির কাছ থেকে সফর পরিকল্পনা পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড।
বিসিবির বায়ো-বাবলে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে উইন্ডিজ দলের সদস্যদের। এ সময়ে কভিড টেস্ট করা হবে তিনবার। হোল্ডাররা পৌঁছানোর পর কভিড টেস্ট দিয়ে হোটেলবাস শুরু করবেন বায়ো-বাবলের ভেতরে। ঢাকায় অবস্থানের তৃতীয় দিন হবে দ্বিতীয় টেস্ট। আর তৃতীয় টেস্ট হবে ষষ্ঠ দিনে। এই তিন টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হলে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারবে দলটি। সফর চলাকালে প্রতি এক সপ্তাহ পর উভয় দলের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফকে কভিড টেস্ট দিতে হবে। নিউ নরমাল সময়ে আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস এটি। প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে তারই প্রাক মহড়া দিল বিসিবি। নভেম্বরে পাঁচ দলের টি২০ টুর্নামেন্ট দিয়ে মহড়ার পরিধি বাড়াবে। এর চেয়েও বড় পরিসরে বায়ো-বাবল ব্যবস্থাপনা করতে হবে হোম সিরিজে। কারণ ম্যাচ অফিশিয়াল, ধারাভাষ্যকার, টিভি ক্রুদের রাখতে হবে হোটেলে। বিসিবির বায়ো-বাবল গাইডলাইন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে দ্রুতই কাজে নেমে পড়তে হবে স্বাগতিক বোর্ডকে। কারণ হাতে খুব বেশি সময় নেই। নভেম্বর-ডিসেম্বর এই দুই মাসেই গুছিয়ে নিতে হবে নিজেদের।
খুলনা গেজেট/এএমআর