অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ প্রস্তুত রেখেছে মিয়ানমার। তবে জাহাজটি এখনও বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের অনুমতি পায়নি। ফলে ঝুলে রয়েছে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রোববার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকটি হয়। এতে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত দেশটির সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে অন্তত ৩৩০ নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ানমার শুরুতে তাদের নাফ নদ হয়ে রাখাইনের মংডুতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ তাদের উড়োজাহাজে ফিরিয়ে নেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব দেয়। মিয়ানমার উড়োজাহাজের পরিবর্তে নাগরিকদের সমুদ্রপথে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলে দু’দেশ সম্মত হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের কীভাবে, কোন পথে ফেরত নেবে– তার বিশদ পাঠিয়েছে নেপিদো। শুরুতে কক্সবাজারের জেটি থেকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করা হলেও এখন মাঝসমুদ্র থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তত্ত্বাবধানে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিজ নাগরিকদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের জাহাজটি গত শুক্রবার থেকে সমুদ্রে অপেক্ষা করছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, একটি দেশের নৌবাহিনীর কোনো জাহাজ আরেক দেশের জলসীমায় প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। ফলে ঢাকার সবুজ সংকেত পেলেই কেবল তারা বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই জাহাজটিকে অনুমতি দেওয়া হবে। মাঝসমুদ্র থেকে একসঙ্গে সবাইকে ফেরত পাঠানো হবে। এখন ফেরতের বিষয়ে নথিপত্র তৈরির কাজ চলছে। পুরো হস্তান্তর প্রক্রিয়া হবে বিজিবির মাধ্যমে। আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে আহত রয়েছে অনেকে, তাদেরও পাঠানো হবে।
সূত্র জানায়, ইয়াঙ্গুন থেকে পাঠানো মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ গত শুক্রবার থেকে রাখাইনের রাজধানী সিত্তেতে অপেক্ষা করছে। সেখান থেকে এটি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকতে থাকা জেটিতে এসে নাগরিকদের নেওয়ার কথা ছিল। তবে গতকালের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঢাকা।
বর্তমানে সিত্তে বন্দরসহ রাখাইনের আশপাশের এলাকায় মিয়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইনের রাজধানী সিত্তেতে থাকা বাংলাদেশ কনস্যুলেট আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। তবে দুই ধাপে সেখানে কর্মরতদের সরিয়ে ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাসে নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ভারত রাখাইনে থাকা তাদের মিশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।