এলো বনান্তে পাগল বসন্ত/বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,চঞ্চল তরুণ দুরন্ত/বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,/পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে/রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।
মাঘের শেষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারে কড়া নাড়ছে কবির সেই পাগল বসন্ত।ক্যাম্পাসে বইছে বসন্তের মৃদু মন্দ বাতাস। রং বেরঙের ফুলে নবরূপে সেজেছে প্রিয় আঙ্গিনা।
বাংলার রূপ প্রকৃতির জুড়ি মেলা ভার ।এখানে একেক ঋতুর বৈশিষ্ঠ্য একেক রকম। একেক ঋতুতে প্রকৃতির বৈচিত্রময় রূপ গুণ ও সৌন্দর্যের দেখা মেলে । প্রকৃতির এমন রূপে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না।মাঘের শেষে চির রিক্ত ঋতু শীতের শুষ্কতা কাটিয়ে যখন জারুল হিজলের নতুন কুশি বের হয় তখন বোঝা যায় প্রকৃতিতে ঋতুরাজের আগমনী বার্তা ধ্বনিত হচ্ছে।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আঙ্গিনায়ও তার ব্যাতায় ঘটেনি।
চারুকলা স্কুল সংলগ্ন সূর্যমুখী বাগানে নিস্তেজ হয়ে নুয়ে পড়া সূর্যমুখী ফুল, আকাশে বাতাসে আম গাছের কচি পাতার ঘ্রাণ, হৃদয়শীতল করা ফাগুনের ঝিরিঝিরি বাতাস এসব যেন ইঙ্গিত দেয় বসন্ত এসে গেছে। শুধু কি মৃদু মন্দ শীতল হাওয়া! ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন এখন সেজেছে লাল, নীল,হলুদ, বেগুনী,কমলা রঙের বাহারী ফুলে।।বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের করেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা মেলে হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো অলকানন্দার। ফাউটে নার্সারীতে রয়েছে খুবির অষ্টম আশ্চর্য স্বরূপ নাগালিঙ্গম।ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কৃত্তিমভাবে খনন করা জলাশয়ে দখিনা হাওয়ায় দোল খাচ্ছে লাল নীল শাপলা। যার স্নিগ্ধতা প্রতিনিয়ত সবাইকে মুগ্ধ করছে। সকালে যখন সূর্য উঁকি দেয় শার্লি ইসলাম লাইব্রেরীর পাশের সূর্যমুখী বাগান যেন হেসে উঠে। কি তার শোভা! এছাড়াও রয়েছে জবা, গাঁদা ,রঙ্গন, টুকটুকে বাগানবিলাস, সিলভিয়া, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, টগর, পিটুনিয়া, চামেলী, কসমস, সাদা স্নোবলসহ নানান ফুল। ফুলের মধুর লোভে ক্যাম্পাসে আনাগোনা বেড়েছে মৌমাছি ও পাখিদের।এসব ফুলের পাশাপাশি রয়েছে নানান প্রজাতির বৃক্ষরাজি ।পাতা ঝরে পড়ার পর সেগুলোতে সবে দেখা মিলছে ঝলমলে সবুজ পত্রপল্লব।ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে সবুজের সমারোহে। গাছে গাছে পাখির কলকাকলি। মাঝে মাঝে শোনা যায় কোকিলের কুহু কুহু ডাকও – এ যেন কংক্রীট আর যান্ত্রিক শহরের বুকে একটুকরো স্বর্গ।
এই যান্ত্রিকতার জীবনে একটুকরু প্রশান্তির খোঁজে বিকালে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরা।পরিবার ও প্রিয়জন নিয়ে ছবি তুলে আড্ডা দিয়ে পার করছে অবসর সময়টুকু।
ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা এক দম্পতি জানান, ‘ব্যস্ততা থাকার কারণে খুলনার বাইরে তেমন যাওয়া পড়ে না।তাই যখনই সময় পায় ইউনিভার্সিটিতে চলে আছি।নির্মল সবুজ পরিবেশের ভিতর থাকতে কার না ভালো লাগে!তার উপর থাকে যদি এমন সুন্দর সূর্যমুখীর বাগান তখন মন তো বারবার সেখানেই টানবে।তাছাড়া বিকালের দখিনা বাতাসে এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে ওয়াকওয়ে দিয়ে হাটা সে এক অন্য রকম অনুভুতি।’
বসন্তকে বরণ করে নিতে শুধু যে প্রকৃতি ব্যস্ত তা নয়। ব্যস্ত সময় পার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের তরুণ তেজদীপ্ত সদস্যরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গানের সংগঠন ভৈরবী’র বসন্ত বরণে এবারের নিবেদন ‘বাউলা বাতাস’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। যেখানে বসন্তকে বাউল সংগীতের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হবে। নৃত্য সংগঠন রিদম বসন্তকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশেষ ফ্লাশমবের।এছাড়াও কিছু দিন পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরে উদযাপিত হবে বসন্ত পঞ্চমী উৎসব।
এ উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে ক্যাম্পাসের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইস্ফাতারা নদী বলেন,‘একটানা ক্লাস শেষে যখন ক্যাম্পাসের এই সূর্যমুখী বাগানের সামনে এসে দাঁড়ায় তখন সব ক্লান্তি যেন দুর হয়ে যায়।ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় পরিকল্পিতভাবে লাগানো ফুল সত্যিই অসাধারণ। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় বহিরাগতদের চাপে সেই সৌন্দর্য কিছুটা ম্লান হচ্ছে। এ ব্যাপারে কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
সবুজ ক্যাম্পাসে খোশগল্পে মেতে থাকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অনামিকা হীরা বলেন, ‘এটাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো আমার প্রথম বসন্ত। এই অল্প সময়ে ক্যাম্পাসের রীতিনীতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। সেগুলো সত্যিই অসাধারণ। আর বসন্তকালে প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেই সাথে রিদম ভৈরবীর মতো সংগঠনের দ্বারা আয়োজিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাগুলো ক্যাম্পাসকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলছে। এগুলো সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।ক্যাম্পাসকে জীবন্ত রাখার জন্য এসব সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ‘
খুলনা গেজেটে/কেডি