ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সংবর্ত-৩৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এক বছর পদার্পণ উপলক্ষে ব্যাচ-ডে পালন করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ‘ব্যাচ-ডে’র অনুষ্ঠানকে ঘিরে কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করা হলেও এখানে দেখা গিয়েছে কিছু ভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীদের একে অপরের টি-শার্টে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল বাক্য লিখতে দেখা গেছে। এছাড়া উদযাপনকালে তাদেরকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের বেদীতে জুতা পায়ে উল্লাস, ফটোসেশন ও কালার ফেস্ট করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা, আনন্দ র্যালি, কেক কাটার মধ্যে দিয়ে ব্যাচ-ডে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু করা হয়। এতে ব্যাচের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে ফ্লাশ মব শেষে শুরু হয় কালার ফেস্ট। এসময় শিক্ষার্থীরা একে অপরের দিকে রং ছুড়তে থাকেন। এর একপর্যায়ে গ্রুপ ছবি তোলার জন্য মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে তারা সমবেত হয়। এসময় ম্যুরালের বেদীতে জুতা পায়ে দিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা যায় তাদের। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থীকে তার সহপাঠীদের টি-শার্টে অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ (গণমাধ্যমে প্রকাশের অযোগ্য) শব্দ ও বাক্য লিখতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, এ ধরনের তথাকথিত ব্যাচ ডে শিক্ষার কোন অংশ হতে পারেনা।এটা আমাদের প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা শেখায়। এ ধরনের অশ্লীল চর্চা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে চলতে থাকলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবেশ ও মান নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।
অপর শিক্ষর্থী মেহেদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একজন শিক্ষার্থী আসলে কি শিখছে? কতোটা নৈতিক অধঃপতন হলে এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে। তারা শিক্ষিত হলেও তাদের মধ্যে নৈতিকতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টি আমদের জন্য লজ্জার।
আরেক শিক্ষার্থী তামিম বলেন, এটা একটা বিকৃত মানুষিক চর্চা। এখন হরহামেশাই যে কোন অনুষ্ঠানে ছেলে-মেয়েরা এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমার চাওয়া ভবিষ্যতে যেন কোন শিক্ষার্থী এহেন কার্যকলাপ আর না করতে পারে সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নজর রাখবে।
অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান বলেন, যেটা হয়েছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না। আমরা নতুন হওয়ায় অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। টি-শার্টে অশ্লীল বাক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, কে বা কারা করেছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আচরণবিধির বিষয়ে দিকনির্দেশনা সাপেক্ষে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। আমরা বিষয়গুলো দেখেছি এবং আগামী শনিবার প্রক্টর অফিসে তাদেরকে ডেকেছি। সার্বিক বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখব।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এটার আয়োজক কারা বা কেন করেছে এ বিষয়ে আমি জানি না। তবে যদি এমন কুরুচিপূর্ণ বাক্য কেউ ব্যবহার করে তাহলে অবশ্যই সেটি একটি নিন্দনীয় কাজ। আমি বিষয়টা খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো।
খুলনা গেজেট/কেডি