স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শুধু জনসেবা করেন না। তাদের মধ্যে অনেকে খেলাধূলার সাথেও সম্পৃক্ত থাকেন। এমনই এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোঃ নাজমুল ইসলাম। যিনি একজন ইউপি সদস্য থেকে জাতীয় রেফারি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
নাজমুলের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামে। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৬ সালে সরকারি এম এ মজিদ (ডিগ্রী) কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর পড়াশোনার পর্ব শেষ করেন। এলাকার যুব সমাজের কাছে খুবই পরিচিত সদালাপী এবং পরোপকারী নাজমুল ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনেও তিনি একই ওয়ার্ড থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বয়সে তরুণ নাজমুল ইসলাম ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনসেবার পাশাপাশি খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবল খেলা থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক টিমের হয়ে খেলেছেন। খেলেছেন খুলনা ২য় বিভাগ লীগে নামকরা ফুটবল ক্লাবের পক্ষে।
ফুটবলের মাঠে একজন খেলোয়াড় হিসেবে রেফারির অনেক ভুল সিদ্ধান্ত তাকে মর্মাহত করেছে। তার চোখে ধরা পড়ে রেফারির পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ। এরপর থেকেই দৃঢ়চেতা নাজমুল ইসলাম রেফারি হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সাথে সাথে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন নিজে রেফারি হতে পারলে সঠিক নিয়ম-কানুন, অর্থের প্রলোভন এবং চাপে না পড়ে সঠিক আইন প্রয়োগ করে রেফারিং( ফুটবল খেলা পরিচালনা) করবেন। রেফারি হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ২০১০ সালে সর্বপ্রথম বাগেরহাট শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে ১০ দিনের রেফারিং প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন।
এরপর খুলনা জেলা রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের ৩য় শ্রেণীর রেফারি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ৩য় শ্রেণীভূক্ত রেফারি থেকে ২য় শ্রেণীভুক্ত রেফারিতে উন্নীত হন। এবং ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১ম শ্রেণীর রেফারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১ম শ্রেণীর রেফারিতে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর তার সর্বশেষ ইচ্ছা জাতীয় রেফারিতে নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এরই অংশ হিসেবে ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পরিচালনায় ও রেফারিজ কমিটির সহায়তায় প্রথম শ্রেণীর রেফারি হতে জাতীয় শ্রেণীর রেফারিতে পদোন্নতিকরণ পরীক্ষা ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিটনেস ও বাফুফে ভবনে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পরীক্ষায় নাজমুল ইসলাম অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২১ সালের ১৪ জুলাই বাফুফে রেফারিজ কমিটির ৩য় সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেফারিজ কমিটির এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাজমুল ইসলামসহ ৭ জনকে চুড়ান্তভাবে জাতীয় শ্রেণীর রেফারিতে উন্নীত করে। নাজমুল ইসলাম ইউপি সদস্যসের পাশাপাশি একজন জাতীয় রেফারি হিসেবে এলাকায় সমাদৃত হচ্ছেন।
রেফারি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর নাজমুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সুনামের সাথে বঙ্গবন্ধু চ্যাম্পিয়ার্স লীগ, বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক চ্যাম্পিয়ন ন্যাশনাল লীগ, বিসিএল লীগ, খুলনা জেলার ১ম, ২য় ও ৩য় বিভাগ ফুটবল লীগের খেলা পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার সুনাম রয়েছে।
নাজমুল ইসলামের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামে। পিতার নাম আব্দুল খালেক হাওলাদার। ঐতিহ্যবাহী দিঘলিয়া ইয়ং মেনস এসোসিয়েশন (ওয়াই এম এ)’র একজন সক্রিয় সদস্য তিনি । ব্যক্তিগত জীবনে নাজমুল ইসলাম এক পুত্র সন্তানের গর্বিত পিতা। তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম