নওগাঁর মান্দায় রমজান সামনে রেখে অবৈধভাবে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য মজুত করায় এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। তার মজুত করা সব পণ্যও জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে মান্দা উপজেলা প্রশাসন অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালায়।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত উপজেলার পরাণপুর ইউনিয়নের সোনাপুর ও কালিতলা বাজার এলাকার মাসুদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দুটি গোডাউনে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
এসময় অবৈধভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুতের দায়ে মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানাকে (৪৫) আটক করেন ইউএনও। মাসুদ রানার বাড়ি উপজেলার পরাণপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মনসুর আলী।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় পরাণপুর ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য মজুতের সন্ধান পায় উপজেলা প্রশাসন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মজুতবিরোধী অভিযান চালানো হয় সোনাপুর গ্রামের মাসুদ এন্টারপ্রাইজের গোডাউনে।
ওই গোডাউন থেকে ১৩ হাজার ১৩৫ লিটার সয়াবিন তেল, ১ লাখ ২৮ হাজার কেজি গম, ৮ হাজার কেজি আটা, ২৭ হাজার ১৭৫ কেজি এ্যাংকর ডাল (ছোলা), ৪ হাজার ৫০ কেজি চিনি, ৪ হাজার ৭০০ কেজি বুট, ৫ হাজার ৯২০ কেজি পামওয়েল এবং ১ হাজার ২০০ কেজি লবণ জব্দ করা হয়। যার মূল্য ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
অভিযান শেষ না হতেই ওই মুহূর্তে তার আরও একটি গোডাউনের তথ্য আসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানার কালিতলা বাজার এলাকার দোকান সংলগ্ন গোডাউনে দ্বিতীয় দফায় রাতভর অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে সেখান থেকে আরও ৭ হাজার ৪৭৪ কেজি ময়দা, ৮২৫ কেজি এসিআই ব্র্যান্ডের লবণ, ৩ হাজার ৮৫০ কেজি মোটা লবণ (গো খাদ্য), ৯০০ কেজি বস্তাজাত খোলা লবণ, ৩ হাজার ৬৬৭ লিটার সরিষার তেল, ১ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কেজি গম, ৫ হাজার ৪০৪ লিটার পামওয়েল, ৪ হাজার ৫৩ লিটার সয়াবিন তেল, ১ হাজার ৬০০ কেজি মুড়ি, ২৩ হাজার ৭৫ কেজি এ্যাংকর ডাল (ছোলা), ৯০০ কেজি খৈল (গো খাদ্য), ৮ হাজার ৬৮০ কেজি ভুষি (গো খাদ্য), ৫ হাজার ৮১০ কেজি তুষার ভুষি (গো খাদ্য), ৫ হাজার ৮৫০ কেজি ব্রয়লার ফিড (মুরগির খাদ্য), ১৩ হাজার ৬৪০ কেজি চাকি আটা (গো খাদ্য), ৩৭৫ কেজি ছোলা, ৪ হাজার ৫৭৫ কেজি মসুর ডাল এবং ৮ হাজার ৭০০ কেজি চিনি জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবসায়ী মাসুদ রানা দীর্ঘদিন যাবত লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর মজুতবিরোধী অভিযান চালিয়ে তার অবৈধ ২টি গোডাউন থেকে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৩ টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য জব্দ করা হয়েছে। পরে গোডাউনগুলো সিলগালা করা হয়। এ ধরনের অপরাধে আর্থিক জরিমানা যথেষ্ট নয়। তাই মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর ৪ ধারা অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে বাদী হয়ে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জব্দকৃত খাদ্যপণ্য পরবর্তীতে কী করা হবে সে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
মান্দা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী গণমাধ্যমকে বলেন, মজুতবিরোধী অভিযানে কোটি টাকা মূল্যের খাদ্যপণ্য জব্দের পর ওই ব্যবসায়ীকে আটক করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অনুমতিক্রমে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। বর্তমানে ব্যবসায়ী মাসুদ রানা পুলিশের নজরদারিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদী হয়ে মামলা করলে মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
মজুতবিরোধী অভিযানে অন্যদের মধ্যে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়, মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকির মুন্সী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) মতিয়ার রহমান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থ্যার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মিডিয়া সেলে পাঠানো এক বার্তায় নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জানান, আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যপণ্য মজুত করে মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। মালামালগুলো মাসুদ এন্টারপ্রাইজ নামে ক্রয় করা হলেও ওই নামে তার কোনো ব্যবসায়িক লাইসেন্স সেই। মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করাই তার মূল ব্যবসা। এ ধরনের মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খুলনা গেজেট/ এএজে