কবর পাকা করা
কবর পাকা করার কোনো রীতি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শে নেই। সাহাবায়ে কেরামের জীবনেও তারা কোনোদিন কবর পাকা করেননি। কবর চিহ্নিত করা যায়। নবি যুগে কবরের বুক বরাবর স্থানটি উটের কুজের মতো সামান্য উঁচু করে দেওয়া হতো। মাথার দিকে একটি পাথর কবরটি চেনার জন্য রাখা হতো। নবি করিম ﷺ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। হজরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত হাদিস পূর্বে উদ্বৃতি হয়েছে। অন্য হাদিসে হজরত আবুল হাইয়াজ আসাদি হতে বর্ণিত তিনি বলেন- একবার হজরত আলি রা. আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাব না, যে কাজে রাসুল ﷺ আমাকে পাঠিয়েছিলেন? ওই কাজ এই যে, কোনো মূর্তি দেখলে তা নষ্ট করে ফেলবে, আর কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দেবে।
-সহিহ মুসলিম, হাদিস-৯৬৯
কিন্তু প্রশ্ন হলো, অনেক সময় দেখা যায় পূর্ববর্তী বুজুর্গদের (পির/আউলিয়া) কবরগুলো প্রায় সবই পাকা করা। হজরত শাহজালাল রহ. এবং হজরত মইনুদ্দিন চিশতি রহ. সহ অনেক পির আউলিয়ার কবর পাকা। এর উত্তরে বলব, প্রথমে আমরা হাদিসের মাধ্যমে জেনেছি যে নবিজি ﷺ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। সাহাবাদেরও এর বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল। তা ছাড়া ফুকাহায়ে কেরাম কবর পাকা করার কোনো অনুমতি দেননি। ইমাম আবু হানিফা রহ. কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন! ইমাম মুহাম্মদ রহ., আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি রহ. এবং ইবনে হাজার আসকালানি রহ. সহ অসংখ্য গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস, ফকিহ যুগে যুগে তা মাকরূহ বলেছেন।
আর যেখানে পরিষ্কার ভাষায় হাদিসে ইরশাদ রয়েছে, সুতরাং কোনো বড় ব্যক্তির কবর পাকা থাকলেই সে কাজ জায়েয হয়ে যাবে না। তা ছাড়া যে-সব মনীষীর কবরকে পাকা করা হয়েছে, তারা নিজেরা কি কখনও তাদের পূর্ববর্তী কোনো বুজুর্গের কবরকে পাকা করেছেন? কিংবা তারা কি তাদের কবরকে পাকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন? অনেক বুজুর্গানে দ্বিনের কবর ঘিরে প্রচুর পাপকর্ম করা হয়, গাঁজার আসর, গানের আসর বসানো হয়, বুজুর্গদের কবরের পাশে এসব গোনাহের কাজ করতে কি সেসব বুজুর্গরা আদেশ করে গেছেন? দেখতে হবে পবিত্র কুরআন ও হাদিস কী বলে? ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ভক্ত মুরিদান বা পরবর্তী ব্যক্তিরা কোনো কাজ করলেই সেটি ওই বুজুর্গের কাজ বলে সাব্যস্ত হয় না। সুতরাং হাদিসের দ্বারা এবং ফুকাহায়ে কেরামের মতামত দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত যে, কবর পাকা করা নাজায়েয।
কবরে ফুল দেওয়া
কবরে ফুল দেওয়া বিদআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজের শত শত প্রিয় সাহাবিকে দাফন করেছেন। মদিনা তাইয়েবায় ফুলেরও অভাব ছিল না। কিন্তু তিনি কারো কবরে ফুল দেন নি কিংবা খোলাফায়ে রাশেদিনও রাসুলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর তাঁর পবিত্র কবরে ফুল দেন নি। অনুরূপ খোলাফায়ে রাশেদিনের কবরেও সাহাবিগণ ফুল দেননি। পরবর্তীতে কোনো একজন সাহাবির কবরে কোনে একজন তাবেয়ি ফুল দিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। গোটা হাদিস-সম্ভারে এর একটি প্রমাণও পাওয়া যায় না। সুতরাং যে কাজ রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে শুরু করে কোনো একজন সাধারণ তাবেয়ি থেকেও প্রমাণিত নয় তা বিদআত বৈ কিছু নয়।
মুজতাহিদ ইমাম ও ফকিহগণ কাফন-দাফন ও কবর সংক্রান্ত ছোট ছোট সুন্নত-মুস্তাহাব ও আদব বিশদভাবে লিখেছেন। প্রায় হাজার বছরের ফিকহ-রচনাবলীতে কোথাও কবরে ফুল দেওয়ার কথা নেই। এটি যদি শরিয়তে অনুমোদন দেয়া হত তাহলে হাজার বর্ষব্যাপী ইমাম ও ফকিহগণ এ থেকে উদাসীন কীভাবে রইলেন? সুতরাং এটি বিদআত বৈ কিছু নয়। আর বিদআত সম্পর্কে নবি করিম ﷺ স্পষ্টভাবে বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে আমাদের দ্বিনে যার অনুমোদন নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত। -সহিহ মুসলিম, হাদিস-৪৪৯২
তাহলে এটা আসল কোথা থেকে? এর জবাবে ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতওয়াসমগ্র)-তে এসেছে,
وضع الزهور على قبور الشهداء أو قبور غيرهم- من البدع التي أحدثها بعض المسلمين في الدول التي اشتدت صلتها بالدول الكافرة، استحسانا لما لدى الكفار من صنيعهم مع موتاهم، وهذا ممنوع شرعا لما فيه من التشبه بالكفار
অর্থাৎ শহিদদের কবরে কিংবা অন্যদের কবরে ফুল দেয়া এমন এক বিদআত যা আবিষ্কার করেছে এমন কিছু মুসলিম রাষ্ট্র যেগুলোর বন্ধন অমুসলিম রাষ্ট্রেগুলোর সঙ্গে দৃঢ়। কাফেররা তাদের মৃতদের সঙ্গে যা করে এরাও তাদের অনুকরণে তা করে। এটি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। কেননা, এতে কাফেরদের সদৃশতা গ্রহণ বিদ্যমান। -ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা, ফতওয়া নং ৪০২৩
কবরে মোমবাতি জ্বালানো
কবরে মোমবাতি জ্বালানো জায়েয নয়। এটা বড় গোনাহ ও শিরকি কাজের অন্তর্ভুক্ত। এক হাদিসে কবরের উপর যারা বাতি জ্বালায় তাদের উপর রাসূলুল্লাহ ﷺ অভিসম্পাত করেছেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-৩২৩৬
কবরে সিজদা করা
কবর জিয়ারত মুসলমানের জন্য সুন্নত। কিন্তু কবরকে সেজদা করা যাবে না। কবরকে উদ্দেশ্য করে নামাজ পড়তে পারবে না। চাই মৃত ব্যক্তি যত বড় অলি-বুজুর্গ হোন না কেন। ইসলাম আল্লাহকে ছাড়া কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দেয়নি। সৃষ্টিকে সেজদা করা হবে হারাম বা কুফরি। কবরকে সেজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। কবরে সেজদাকারীর প্রতি আল্লাহ তায়ালা অভিশম্পাত দেন। কারণ, ইহুদি-খ্রিস্টানরা নিজেদের নবীর কবরকে সেজদা করত, যার ফলে তারা অভিশপ্ত হয়েছে। সুতরাং একজন মুসলমানের পক্ষে কখনও কবরকে সেজদা করা সম্ভব নয়। এ শিরক কাজে লিপ্ত হতে পারে না। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন-
ألَا وإنَّ مَن كانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أنْبِيَائِهِمْ وصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ، ألَا فلا تَتَّخِذُوا القُبُورَ مَسَاجِدَ، إنِّي أنْهَاكُمْ عن ذلكَ
সাবধান! তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদের নবিগণ ও সৎ ব্যক্তিদের কবরসমূহকে মসজিদ ও সেজদার স্থানে পরিণত করা হয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ ও সেজদার স্থানে পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করছি। -সহিহ মুসলিম, হাদিস-১২১৬
অপর এক রেওয়াতে এসেছে, হজরত আয়িশা রা. বলেন- রাসুলুল্লাহ ﷺ যে রোগ থেকে সেরে উঠেননি, সে রোগে (জনৈক ইহুদি নারী কর্তৃক বিষ প্রয়োগে) আক্রান্ত অবস্থায় বলেছেন আল্লাহর অভিশাপ হোক ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি। কেননা, তারা তাদের নবিদের কবরসমূহকে মসজিদ ও সেজদার স্থানে পরিণত করেছে।
-সহিহ বুখারি, হাদিস-১৩৪৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস-১২১২
মাজারে হাজত প্রার্থনা ও মানত করা
অনেকে আল্লাহর ওলিদের কাছে হাজত প্রার্থনা করে; বরং তাদের নামে নযর-মানতও করে। যেমন অমুক কাজ হয়ে গেলে অমুক বুযুর্গের কবরে গেলাফ চড়াবে বা শিন্নি-মিঠাই পাঠাবে বা ঐ মাজারে এত টাকা দিবে।
এ বিষয়ে দু’টি মাসআলা জেনে নেওয়া দরকার-
এক. মানত মানা, নযর-নিয়ায দেওয়া একটি ইবাদত। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত জায়েয নয়। হানাফি মাযহাবের মশহুর কিতাব ‘আদ্দুররুল মুখতার’-এ আছে-
واعلم أن النذر الذي يقع للأموات من أكثر العوام وما يؤخذ من الدراهم والشمع والزيت ونحوها إلى ضرائح الأولياء الكرام تقربا إليهم فهو بالإجماع باطل وحرام، …، وقد ابتلي الناس بذلك، لا سيما في هذه الأعصار، وقد بسطه العلامة قاسم في شرح درر البحار. (الدر المختار قبيل باب الاعتكاف)
জানা থাকা উচিত যে, অনেক সাধারণ লোক মৃতদের নামে যে-সকল নযর-মানত মানে এবং ওলি-বুযুর্গের কবরে তাদের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে টাকা-পয়সা, তেল-বাতি ইত্যাদি পাঠায় তা বিল-ইজমা বাতিল ও হারাম…। অথচ লোকেরা এতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে বিশেষত এ যুগে। আল্লামা কাসিম (ইবনে কুতলুবুগা) রহ. ‘দুরারুল বিহার’-এর ভাষ্যগ্রন্থে এ মাসআলা বিস্তারিত লিখেছেন।
আল্লামা শামি রহ. বলেন, এ জাতীয় মানত বাতিল ও হারাম হওয়ার কারণ একাধিক।
(ক) এটা মাখলুকের নামে মানত। আর মানত হচ্ছে ইবাদত। অথচ মাখলুকের ইবাদত হয় না।
(খ) যার নামে মানত মানা হয়েছে তিনি মৃত। আর মৃত ব্যক্তি কোনো কিছুর মালিক হয় না।
(গ) মানতকারীর যদি এই বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ ছাড়া ঐ মৃত ব্যক্তিও জগৎ-সংসারের নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে তাহলে তার এ বিশ্বাস কুফরি। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৩৯
কাজি ছানাউল্লাহ পানিপথি রহ. বলেন-
عبادت مر غیرخدارا جائز نيست۔ و نہ مدد خواستن از غیر خدا- پس نذر کردن برائےۓ اولياء جائز نيست کہ نذر عبادت است
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত জায়েয নয়। কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনাও নাজায়েয। সুতরাং ওলিদের নামে মানত-নযর নাজায়েয। কারণ মানত একটি ইবাদত। -ইরশাদুত তালিবিন পৃ. ১৮
মোটকথা, এ মাসআলা সব বড় বড় কিতাবে আছে যে, নযর-মানত ইবাদত আর গায়রুল্লাহর ইবাদত জায়েয নয়। এ কারণে আল্লাহর ওলিদের মাজারে মানত মানা ও নিয়ায চড়ানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম ও বাতিল।
দুই. কেউ যদি এমন মানত করে ফেলে তাহলে তা পুরা করা জায়েয নয়। পুরা করলে গোনাহগার হবে। সুতরাং প্রথম করণীয় হল, গোনাহ থেকে তওবা করবে আর দ্বিতীয়ত গোনাহ থেকে বিরত থাকবে।
কবর জিয়ারত ও সালাম প্রদানের সঠিক পদ্ধতি
► কবর জিয়ারত করা একটি সুন্নত আমল। এতে অন্তর নরম হয়, চোখ অশ্রুসিক্ত হয় এবং মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। আল্লাহর রাসুল ও সাহাবায়ে-কেরামগণ নিয়মিত কবর জিয়ারত করতেন।
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন-
كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا وَتُذَكِّرُ الْآخِرَةَ
আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখ বানায় এবং আখিরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। -সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস-১৫৭১
কবরস্থানে গেলে প্রথমে কবর জিয়ারতের দুআ পড়া। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে কিছু দরূদ শরিফ, সুরা ইত্যাদি পড়া। মাইয়্যিতের মাগফিরাতের জন্য দুআ করা। হাদিস শরিফে যেমন কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি দরূদ শরিফেরও ফজিলত এসেছে। তাই দরূদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস ও যে-সব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো পড়ে ইসালে সওয়াব করা। সালাম-দরুদ পেশ করা হলে কবর থেকে একটু ঘুরে কিবলামুখী হয়ে দুআ করা সুন্নাত। যেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে না যায়। কেননা তারা মাইয়্যেতের কাছে প্রার্থনা করে। তাই ইসলামের শিক্ষা হলো, অমুসলিমদের সাদৃশ্য গ্রহণ না করা।
في حدیث ابن مسعود رضي اللّٰہ عنہ: رأیت رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم في قبر عبد اللّٰہ ذي النجادین“ الحدیث۔ وفیہ: ”فلما فرغ من دفنہ استقبل القبلة رافعا یدیہ“۔ أخرجہ أبوعوانہ في صحیحہ۔ (فتح الباري: ۱۱/۱۴۴رقم: ۶۳۴۳الدعوت / باب الدعاء مستقبل القبلة)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ যুননিজাদাইন রা. এর দাফনের ঘটনায় তিনি বলেন, আমি রসুল ﷺ কে আবদুল্লাহ যুননিজাদাইনের কবরে দেখেছি, যখন তিনি তার দাফন থেকে ফারেগ হলেন, দু’হাত তুলে কেবলামুখী হয়ে তার জন্য দোয়া করেন,
হে আল্লাহ! আমি তার ওপর সন্তুষ্ট, আপনিও তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।
-মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস-১৭০৬; ফাতহুল বারি ১১/১৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০
► কবরবাসীকে সালাম দেওয়া এবং জিয়ারত করার পদ্ধতি হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। সে পদ্ধতি ছাড়া কবরবাসীর সাথে অন্য কোনো আচরণ বৈধ নয়। হাতের ইশারায় কিংবা কবরের দেয়াল ছুঁয়ে সালাম দেওয়া এবং কবরকে চুমু দেওয়া বিদআত ও নাজায়েয। কবরবাসীকে সালাম দেওয়ার সহিহ পদ্ধতি বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আয়িশা রা. বলেন, রাসুলে কারিম ﷺ শেষ রাতে বাকি, কবরস্থানে যেতেন এবং বলতেন-
السلام عليكم دار قوم مؤمنين، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون
অর্থ- হে মুমিন কবরবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। -সহিহ মুসলিম, হাদিস-২৪৯
অন্য হাদিসে এসেছে, সুলায়মান রাহ. তার পিতা বুরায়দা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসুলে কারিম ﷺ সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন, তারা যখন কবরস্থানে যাবে কবরবাসীকে যেন এভাবে সালাম দেয়-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
অর্থ- হে মুমিন ও মুসলিম কবরবাসী! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে শান্তি দান করেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস-১৫৪৭
অতএব হাদিসে বর্ণিত নিয়মেই কবরবাসীকে সালাম দিতে হবে। হাতের ইশারায় বা কবর ছুঁয়ে সালাম দেওয়া যাবে না। -ফাতহুল কাদির ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬
দরূদে হাজারি
কোন কোন এলাকার গোরস্থানে প্রবেশের মুখেই বড় করে সাইনবোর্ড তৈরি করে অতি যত্নের সাথে দরূদে হাজারি নামে একটি দরূদ লিখে রেখেছে। নিচে ফজিলত হিসেবে লেখা আছে, ‘কবরের নিকট গিয়ে এই দরূদ তিনবার পাঠ করিলে ঐ কবর ওয়ালার চল্লিশ বছরের কবরের আজাব মাফ হইয়া যাইবে।’ এ ধরনের দরূদ ও ফজিলতের কোনো ভিত্তি নাই। এছাড়া এতে না আছে দরূদের নুর, না আছে সাহিত্যের মাধুর্য; বরং এর ভাষায়ই রয়েছে কিছু অসৌজন্যমূলক শব্দ। আমাদের উচিত এ ধরনের ভিত্তিহীন কথা বিশ্বাস না করা এবং মানুষকে সঠিক বিষয় জানানো। গোরস্থানের পরিচালনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করে ঐ স্থলে কবর জিয়ারতের দুআ, জিয়ারতের আদব, মৃত্যুর স্মরণ-এ জাতীয় আয়াত ও হাদিস লিখে দেওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা আমল করার তাওফিক দান করুন।
খুৃলনা গেজেট/ এএজে