উৎসবের মাধ্যমে নতুন বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছে সরকার। তবে বঞ্চিত হয়েছে অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। অল্প কিছু বই পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের। টেন্ডার, কার্যাদেশ, চুক্তিÑ ইত্যাদিতে বিলম্ব হওয়ায় এখনো নতুন শিক্ষাক্রমে প্রণীত এই দুই শ্রেণির সব বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে দুটি ছাপাখানায় এখনো প্রায় ২০ লাখ বই ছাপা ও মুদ্রণ বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র।
অন্যদিকে, ছাপাখানাগুলো বলছে- আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এসব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই ছাপার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির বই ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির বই ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি। এর বাইরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (পাঁচটি ভাষায় রচিত) শিশুদের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ৩১ কপি, ৫ হাজার ৭৫২ কপি ‘ব্রেইল’ বই এবং শিক্ষকদের জন্য ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি ‘শিক্ষক সহায়িকা’ ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এনসিটিবির উৎপাদন ও বিতরণ শাখা সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকের শতভাগ বই উপজেলায় পৌঁছে গেলেও মাধ্যমিকের কিছু বই বাকি রয়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির প্রায় ২০ লাখের মতো বই এখনো পাঠানো যায়নি। দুটি ছাপাখানার কাছে এসব বই বাকি রয়েছে। এর মধ্যে মোল্লা প্রিন্টিংয়ের কাছে কারিগরি স্তরের প্রায় ২ লাখ বই এখনো বাকি রয়েছে। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ছাপাখানাগুলো বই দিতে পারবে। এসব বইয়ের বেশিরভাগই ছাপা হয়েছে। তবে বাঁধাইয়ের কাজ বাকি। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এসব বই চলে যাবে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার আগেভাগে বইয়ের কাজ শুরু করে এনসিটিবি; কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত না হওয়ায় ছাপার কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। গত বছর নতুন শিক্ষাক্রমের বই নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। তাই বিতর্ক এড়াতে এবার বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে সতর্ক ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েক দফা যাচাই-বাছাই শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে মোল্লা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী মিন্টু মিয়া বলেন, এবার মাধ্যমিকের বইয়ের পাণ্ডুলিপি হাতে পেতেই দেরি হয়েছে। কয়েকটি লটে পাওয়া ১ কোটি ৬০ লাখ বই পাঠিয়ে দিয়েছি। অল্পকিছু বাকি রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তা পাঠিয়ে দেব।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। সব শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পঞ্চগড়সহ কয়েকটি জেলায় কিছু বই এখনো পাঠানো যায়নি। এগুলো দ্রুত চলে যাবে। নিম্নমানের বই দেওয়া ছাপাখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বই পাঠানোর সময় আছে। এরপর আমরা নিম্নমানের বইয়ের বিষয়ে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, তার ওপর ভিত্তি করে যাচাই করে ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীও খোঁজখবর নিয়েছেন।