আমিরুল ইসলাম ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। ১৯৮৭ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাকতা শুরু করলেও ছাত্র জীবন থেকেই তিনি গণিতের শিক্ষক হিসেবে অভিভাবকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত এবং সমাদৃত ছিলেন। ৩৬ বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা পেশায় তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া টানা ২০ বছর ঐতিহ্যবাহী ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সততা, দক্ষতা যোগ্যতা এবং সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তার কর্ম জীবনের শেষ ১৪ বছর খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিদ্যালয়টিকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। গত ১১ জানুয়ারি তার দীর্ঘ ৩৬ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের সমাপ্তি হয়েছে।
মোঃ আমিরুল ইসলাম কর্মজীবনের শুরুতে এজিবি (একাউন্ট জেনারেল বাংলাদেশ)’র অডিটর পদে চাকুরী পান কিন্তু তার পিতা মরহুম আলহাজ্ব মুন্সী সাঈদ শেখের ইচ্ছায় শিক্ষকতার মহান পেশা বেছে নেন। ১৯৮৭ সালে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন দৌলতপুর থানাধীন প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী মহেশ্বরপাশা কৃষ্ণমোহন হাই স্কুলে। বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকে তিনি ওই অঞ্চলে একজন দক্ষ গণিত শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক সুনাম এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০০৪ সালে তিনি একই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে টানা ২২ বছর উক্ত প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
এরপর আমিরুল ইসলাম ২০০৯ সালের ১ জুলাই খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকে তিনি বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সহকর্মী শিক্ষকবৃন্দ, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ, প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সকল পর্যায়ের প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে এর মান অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করার কাজ শুরু করেন। তার দক্ষ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, সহশিক্ষা,খেলাধুলা, স্কাউটিং ইত্যাদি কার্যক্রমে উপজেলা, জেলা, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সাফল্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
মোঃ আমিরুল ইসলাম খুলনা বিভাগের “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান” এবং খুলনা জেলার “শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান ” নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন জতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ সালে।
২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় প্রতিবারই উপজেলায়”শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান” নির্বাচিত হয়েছেন। একজন সুদক্ষ প্রতিষ্ঠান প্রধানের যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি হিসাবে মো: আমিরুল ইসলাম এবং তার প্রতিষ্ঠান উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক ভাবে এ সকল শ্রেষ্ঠত্বের সন্মাননায় ভুষিত হয়েছে।
শিক্ষা, সহশিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক সাফল্য বিবেচনায় বিদ্যালয় ২০১০ সালে মডেল প্রকল্পভুক্ত হয়। কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম,বিজ্ঞানাগার সহ অবকাঠামোগত ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিদ্যালয় অঙ্গন সবুজে ঘেরা,সাজানো গোছানো মনমুগ্ধকর অপরূপ পরিবেশ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনে প্রধান শিক্ষক হিসাবে মোঃ আমিরুল ইসলামের নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা, বারবার প্রশংসিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের এই চমৎকার আঙ্গিনায় শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আনন্দঘন উৎসব মুখর চিত্তে শিক্ষা, সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।
মোঃ আমিরুল ইসলাম শিক্ষারতার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ স্কাউটস খুলনা জেলার সাধারন সম্পাদক, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি( দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক গঠিত) দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতি, দিঘলিয়া (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি,দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতি; দেশের প্রখ্যাত গণিতবিদ শেখ হারুন অর রশিদ স্যারের প্রতিষ্ঠিত গণিতবিদদের সংগঠন “গণিত ফোরাম খুলনা”এর সহ-সম্পাদক ইত্যাদি পদে দায়িত্ব পালন সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে পেশাগত এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিনি নায়েম, এইচএসটিটিআই হতে প্রশাসনিক এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, আইসিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা,অধিদপ্তরের অধীন কারিকুলাম এর উপর “প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাস্টারট্রেনার” হিসাবে দায়িত্ব পালন সহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর এর অধীনে উচ্চতর গণিতের পরীক্ষক ছিলেন।
মোঃ আমিরুল ইসলাম ঐতিহ্যবাহী দিঘলিয়া এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে ১৯৮০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান গ্রুপে ৪ টি বিষয়ে (গণিত,রসায়ন,জীব ও উ:গণিত) লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। (সে বছর খুলনা ও বরিশাল বিভাগ নিয়ে গঠিত যশোর বোর্ডে এক হাজারের মত শিক্ষার্থী ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন)। সরকারি বিএল কলেজ হতে এইচএসসি এবং বিএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি গণিতে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি বিএড, এলএলবি এবং ইংরেজি বিষয় সহ দুটি বিষয়ে মাষ্টার ডিগ্রি অর্জন করেন।
আমিরুল ইসলামের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামে। গ্রামেই তার শৈশব কৈশোর এবং যৌবন কেটেছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন এ গ্রামেই।