ফিলিস্তিনের গাজায় একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ভেতরে কী যেন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন আবু আওয়েইদা। বললেন, ‘আমি এখানে প্রতিদিন আসি। তাঁদের খুঁজি।’ ধ্বংসস্তূপের নিচে আবু আওয়েইদা খোঁজেন তাঁর পরিবারের তিন শিশুকে। এখানেই ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২২ স্বজনকে হারিয়েছেন তিনি।
রোববার ফিলিস্তিন–ইসরায়েল সংঘাতের ১০০তম দিনেও গাজায় নির্বিচার হামলা চালানো হয়। এই উপত্যকার মানুষ এখন স্বজন হারানোর বেদনার সঙ্গে নিজের প্রাণ বাঁচানো নিয়ে দুঃস্বপ্নের সময় পার করছেন। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন ২৩ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি। আহত ৬০ হাজার ৫৮২ জন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের তথ্যমতে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০ জন নিহত হচ্ছেন।
ইসরায়েল রোববারও গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণের রাফা থেকে শুরু করে খান ইউনিস ও দেইর আল–বালাহ এলাকা, মাঘাজি ও বুরেজি শরণার্থীশিবির এবং মধ্যগাজার সালেহ আল–দিন সড়কে হামলার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি হামলা নিহত হয়েছেন ১২৫ জন। আহত ২৬৫।
হতাহতের পাশাপাশি গত ১০০ দিনে ইসরায়েলের হামলায় তছনছ হয়েছে গাজা। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএর হিসাবে উপত্যকাটির ৩ লাখ ৫৯ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। সেখানে ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ১৯ লাখই এখন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। খাবার, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৫টি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
সংঘাতের এই পর্যায়ে এসে গাজার এক বাসিন্দার ভাষ্য, ‘আমি মনে করি, এটা বিশ্ব সৃষ্টির পর মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন ১০০ দিন। পাঁচ সন্তানকে নিয়ে আমি গাজা নগরী থেকে রাফায় পালিয়ে এসেছি। সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স মাত্র দুই বছর। এখন জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ জিনিসই পাচ্ছি না।’
গাজায় চলমান সংঘাতের শুরু গত ৭ অক্টোবর। সেদিন ইসরায়েলে হামলা চালান ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরা। হামলায় নিহত হন ১ হাজার ২০০ জনের বেশি। এ ছাড়া প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করেন হামাস যোদ্ধারা। এর পর থেকে গাজায় নির্বিচার আকাশ, জল ও স্থলপথে হামলা চালানো হচ্ছে। রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘জয় না পাওয়া পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’
গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছোটখাটো হামলা চালিয়েছে হুতিরা। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো তাদের ‘ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব’। গত শনিবার ইয়েমেনে হুতিদের স্থাপনায় মার্কিন–ব্রিটিশ হামলার পর গোষ্ঠীটির মুখপাত্র নাসরুলদিন আমের বলেছেন, ‘এর শক্ত ও কার্যকর জবাব দেওয়া হবে।’
তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে লেবাননের ইরানপন্থী আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। রোববার ইসরায়েল জানিয়েছে, লেবানন সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢোকা তিন বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে তারা।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ রোববার টেলিভিশনে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, দখলদার ইসরায়েল কখনই গাজা দখল করার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে না। হামাসকে নির্মূল করতে পারবে না।
এদিকে শনিবার রাতভর অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। জেনিন, রামাল্লা, নাবলুস, বেথলেহেমসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরা ৪০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৩৪৭ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলিদের হাতে নিহত হয়েছেন।