অভয়নগরে ভৈরব সেতুর সংযোগ সড়কের অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ভৈরব সেতুর সংযোগ সড়কে ওই রেল ক্রসিংয়ে রেললাইনের ২ পাশে রেলপাটি ঝাঁলায় দিয়ে বেড়া তৈরি করে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে এবং ওই ক্রসিং দিয়ে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন তারা।
এদিকে বন্দর নগরী নওয়াপাড়ার আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও শিল্পকারখানার মালিকরা পড়েছেন মহা বিপাকে। বন্ধ হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সার, গম, ভুট্টা, চালসহ খাদ্য, কৃষি ও জ্বালানী পন্য সরবরাহ। আর এর ফলে দেশব্যাপী সার, জ্বালানী (কয়লা) ও খাদ্য শস্যের সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের কোন কাজেই আসছে না। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে গেট নির্মাণ বা প্রহরী নিয়োগের ব্যবস্থা করে রেলক্রসিংগুলো খুলে না দিলে চরম বিপাকে পড়বে সর্বমহল।
জানা গেছে, ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ করেছে এলজিইডি। সেতুর সংযোগ সড়কে রয়েছে একটি রেলক্রসিং। রেলক্রসিংটিতে গেট নির্মাণের পূর্বানুমতি না নিয়ে সেতু নির্মাণ করায় এলজিইডি ও রেলওয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন চলছিলো শালিশ দরবার। পূর্বানুমতি না নিয়ে সেতুর সংযোগ সড়ক হিসেবে রেলক্রসিংটি ব্যবহার করায় মামলা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যেই সম্প্রতি ওই অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে জীবন গেছে ৪ জনের। এর আগে কয়েকজনের প্রান নিয়েছে ওই সড়কটি। যে কারণে তারপর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সংযোগ সড়কটি বন্ধ করে দিয়েছে। লেভেল রেল ক্রসিংয়ে রেললাইনের ২ পাশে রেলপাটি ঝালায় দিয়ে বেড়া তৈরী করে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে এবং ওই ক্রসিং দিয়ে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বন্ধ সংযোগ সড়কের রেলক্রসিং এলাকায় এলজিইডি তৈরি করেছে স্পিড ব্রেকার। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে নানামুখি সমালোচনা। সচেতন মহলের মন্তব্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সংযোগ সড়কের রেলক্রসিংয়ে গেট নির্মাণ ও প্রহরী নিয়োগের পূর্বানুমতি না নিয়ে ভৈরব সেতু নির্মাণ করে বহু নাটকিয়তার পর খুলে দিলেও পুনরায় বন্ধ হওয়ায় মানুষকে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভৈরব সেতুটি অকার্যকর করে সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। স্থায়ী সমাধানের পথে না হেটে রাস্তা বন্ধ করায় হতাশ হয়েছে অভয়নগর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। নওয়াপাড়ায় রেল-সড়ক ও নদীপথ গা ঘেষে চলায় এবং রেলওয়ে লাইনের একপাশে ভৈরব নদী ও একপাশে যশোর-খুলনা মহাসড়ক থাকায় রেলক্রসিংগুলো অতিব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়।
নওয়াপাড়া নদী বন্দর হওয়ার সুবাদে নদীর তীর ঘেষে গড়ে ওঠে অসংখ্য ঘাট ও গুদাম। নদী পথে কার্গো জাহাজে আসা হাজার হাজার মেট্টিকটন সার, কয়লা, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন প্রকার কৃষিপণ্য ও খাদ্য শষ্য কার্গো থেকে আনলোড হয়ে এসকল গুদাম গুলোতে জমা করা হয়। আর এসকল গুদাম হতে ট্রাক যোগে রেলক্রসিং পার হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে।বিশেষ করে দেশের কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সারের সিংহভাগ নওয়াপাড়ার এসকল ঘাট গুদাম থেকে ট্রাকযোগে অরক্ষিত এসকল রেলক্রসিং পার হয়েই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। তাছাড়া এলাকাটি শিল্প এলাকা হওয়ায় এসকল ঘাট ও গুদাম সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু শিল্প কলকারখানা।
এ সকল শিল্প কলকারখানায় উৎপাদিত পন্য বা কাঁচামাল এসকল অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হয়েই আনা নেয়া করা হয়। এবং সর্বত্র সরবরাহ হয়ে থাকে। হঠাৎ করেই এসকল রেলক্রসিং বন্ধ ঘোষণা করায় ঘাট-গুদাম ও কারখানাগুলো থেকে সকল পন্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যা দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন একটি মহল। তাছাড়া সার ও খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলেও আশংকা করেছেন তারা।
খুলনা গেজেট/এনএম